Thursday, May 19, 2022

আমি বরং...

আমি বরং ঘাস হবো।
পিচ পাথরের শহরে বিরক্ত হয়ে দিন শেষে
একবারের জন্য হলেও পা বাড়িয়ে স্বস্তি খুঁজবে আমার শরীরে।
আকাশের চাঁদ হয়ে কি করবো বলো,
সে তোমা হতে বহু থেকে বহু দূরে বাস করে।


আমি বরং বৃষ্টি হবো,
খুব মন খারাপের দিনে
চিলেকোঠায় পা বাড়িয়ে ধুয়ে নেবে অস্বস্তি
অথবা নিজেকে ভিজিয়ে শান্ত করে রাখবে।
সাগর থেকে মহাসাগর কিছুই হবার ইচ্ছা নাই আমার,
নগরীর মোটা গোঁফওয়ালা দারোয়ান
আমার কাছে ভিড়তে দেবে না তোমায়।


তোমার এলো চুল গুলো
বাতাসের তালে ছন্দ তোলে আমার হৃদয়ে।
আমি বরং ফুল হবো,
ওই চুল গুলো সকাল সন্ধ্যা স্পর্শ করার পূর্ণ অধিকার নেবো।

বিভোর তোমায় শিহরিত করতে
আমি বরং বাতাস হবো...


বগুড়া



অনিরাপত্তার স্লোগান


একটা নিরাপদ মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই।
অন্তত একটা স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই।
অসুখে না, ক্ষুধায় না, ট্রাক চাপায় না...
শীতল চোখে উজ্জ্বল হাসির মৃত্যু দেখতে চাই।

চারপাশের তুমুল আহাজারি চিরে একটা কথা মাথায় বেজে ওঠে,
❝হতভাগা দেশে মরেও শান্তি নাই❞
এমন ভাগ্য থেকে মুক্ত হয়ে
শুধু স্বাভাবিক মৃত্যু চাই।

ধর্ষণের পর হত্যা
পুত্রের ক্ষোভে বৃদ্ধ হত্যা
পরকিয়ায় স্ত্রী হত্যা
সংবাদ পত্রের মৃতের মিছিল ছাপিয়ে একদিন শিরোনাম হোক
❝৮১ বছরে অবসরে নামলেন গোরখোদকের হাত ধরে❞।
একটা নিরাপদ শিরোনাম চাই।

অনিরাপত্তার স্লোগান
19 মে 2022
বোদা, পঞ্চগড়



Thursday, May 12, 2022

এপিটাফের অক্ষর

আমার মৃত্যুর পর পবিত্র গ্রন্থ থেকে কোন উচ্চারণ না হোক।

বরং রাজপথে মিছিল নামুক জুতহীন চাষাদের।

আমি সেই মহিমান্বিত নই, যার জন্য সাম্যের গানে পংক্তি উল্লেখিত হবে। 

তবু চাইবো আমার এপিটাফের পরিবর্তে

নির্মিত হোক ধারালো কাস্তে।

ফসল তুলবার সময় যেন কৃষকেরা হাতিয়ারহীন না হয়ে পরে।


পাখিদের কণ্ঠ স্তব্ধ হবার আগে

নগ্ন শিশুর দল কামান দাগুক পৃথিবীর সকল শ্বেত প্রাসাদে।

আর ভবঘুরেরা কাতারবদ্ধ হোক

লাল ফৌজের জমিন চাষ করতে।


জানি পরে থাকা আমার মরদেহ কারো অনুশোচনার কারণ হবে না।

তবু আমার মৃত্যুর পরে সাগরের নোনাজল হিমালয় সমৃদ্ধ করুক,

পৃথিবীর সমস্ত কবিরা এক কলমে সুর বাঁধুক,

যেখানে মানুষের কান্না গর্জে ওঠে স্লোগান হয়ে। 

**************


এপিটাফের অক্ষর 

১৩ এপ্রিল ২০২২

বোদা, পঞ্চগড় 




কল্পনার আহুতি বন্ধ হোক

 সভ্যতার শুরুতে মানুষ যখন ভালোবাসতে শেখে,

ঠিক তখন থেকেই তার মধ্যে জন্ম নেয় হারানোর ভয়।

ভয় ভালোবাসার শেকড়কে মজবুত করে

ভয় ভালোবাসার মাটি আলগা করে দেয়।


ভালো লাগাটা যখন দানা বেঁধে অজানাকে আপন করার অনুভূতি সঞ্চার করছে,

বুকে হাত রেখে দেখুন, 

আপনার হৃপিণ্ডে তখন দামামা বাজছে হারানোর কল্পনা প্রতিহত করতে। 


কি হবে, কি হচ্ছে, কেন আশঙ্কা?

এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার সময় টুকু না দিয়েই 

আপনাকে আঁকড়ে ধরছে যন্ত্রণা। 

আর আপনিও একটু একটু করে পেছনে হাঁটছেন 

শূন্য না হবার চেষ্টা মহাশূন্যের দিকে।


কল্পনায় যাকে এতটা স্থান দিচ্ছেন, 

যাকে চোখের আড়াল হলেই বিষন্নাতায় ডুবছেন, 

যার ছায়া আপনি অন্ধকারেও ট্যার পাচ্ছে,

যার শীতলতার জন্য গুমরে উঠছেন,

অপ্রয়োজনীয় আশঙ্কা একটু একটু করে আপনাকে দূরে সরে দিচ্ছে

সেই আদি অনুভূতি থেকে।


ভয়, 

প্রানীর সহজ জাত প্রবনতার চূড়ান্ত প্রতিফলন।

তবে, ভয়

মানুষ থেকে মানুষ সহস্র মাইল দূরে ঠেলে দেয়।

ভয়, আপনাকে বলতে দেয় না প্রিয় থেকে প্রিয়তম হয়ে ওঠার আকুতি। 

ভয়, হত্যা করে ভালোবাসার অঙ্কুর।


অপ্রয়োজনীয় এই অনুভূতি মুক্ত ভালোবাসা বেড়ে উঠুক, 

কল্পনার আহুতি বন্ধ হোক,

সজীব উল্লাসে ফেটে পরুক মানুষ, 

ভালোবাসা হোক শেষ শব্দ।


***********

কল্পনার আহুতি বন্ধ হোক

১৩ এপ্রিল ২০২২(প্রথম প্রহর)

বোদা, পঞ্চগড়। 



মিথ্

নিঃসঙ্গ হতে হতে ঈশ্বর নামক অস্তিত্বে মনে হতে লাগলো নিজেকে।

প্রথমে একা,

যেখানে কেউ নেই।

লক্ষ্মণ রেখা বা লা-মাকানের বেড়ায় ঘেরা 

এবং যার ভিতর অনন্ত শূন্যতা।

একজন মুহম্মদ সৃষ্টি করতে পারি নি বলেই শূন্যতা গাঢ় অন্ধকারে ঢলে পরেছে। 


এরপর অবিশ্বাস, 

কোন এক সাহিত্যে পড়েছিলাম “হাজারের ভিড়ে একা থাকতে চাইলে সেই মিছিলে নামুন, যার একটিও দাবি আপনার না।”

পৃথিবীর যে মিছিলে আমি পা বাড়ালাম তার একমাত্র দাবি ছিল,

“বেঁচে থাকার সংগ্রাম চলছে”।

এত অচেনা স্বত্বার মাঝে অপ্রয়োজনীয় শ্লোগানের তালে কিছু দিন পরে অবিশ্বাস হতে শুরু করলো নিজের অস্তিত্বের প্রতি। 

আমার ডান হাত বাঁ হাতকে ছুতে পারে না

আমার দৃষ্টি সীমানায় কোটি কোটি মানুষের মিছিল দেখছিলাম 

কিন্তু আমার চোখ ছিল না।

এর পর থেকে আমি হেঁটেই চলেছি কিন্তু এক বিন্দু পরিমাণেও না এগিয়ে।


যখন আপনাকে আমি নিজের কথা বলছি

তখন অস্বীকার নামক চরমতম ঈশ্বরীয় ধাপে আমার অবস্থান। 

যেখানে শুধু ঈশ্বর তার সত্য জানেন 

এবং শুধু তিনিই জানেন বস্তু জগতে তার অস্তিত্ব সবচেয়ে বড় মিথ

যেমন আমি জানি আমার অস্তিত্ব মিথ্যা।



মিথ্

২৭ এপ্রিল ২০২২

বোদা, পঞ্চগড় 



পূর্নিমায় রুপকথা

ভাবছি একটা জারুলের শহর বানাবো

মাঝেমধ্যে কৃষ্ণচূড়া

খুব কাছে থেকে বেলি জুঁইয়ের মৃদু হাসি

ভর সন্ধ্যায় দোলন চাঁপা

মাঠে ঘাসেদের সাথে উঁকি দেবে দোপাটি

মাঝ রাতে হাসনাহেনা ঘুমের রাজ্যে স্বপ্ন বাড়াবে

সবুজে পা বাড়িয়ে দিলে হঠাৎ সুরসুরি দিবে নীলকাঞ্চন

মন খারাপে গান ধরবে করবী

হাসি পেলে দুলে উঠবে কামিনী

শিমুলের ফাঁকে শালিকের ঝাঁক আনমনে বাঁধবে কবিতা 

পলাশ ডালে বউ কথা কও বসবে গল্পের ঝুড়ি নিয়ে 

গন্ধরাজ আঁড়িপাতবে বিকেলের গল্পে

আর পুর্নিমা না হলে নয়নতারা পরীদের খোঁপায় উঠবে

যদিবা চাঁদটা আলতো আলোর ডানায় ভর করে আসে সেই শহরে,

তাহলে নির্বাসন ভেঙে রাধাচূড়া তাকে পানসুপারীর বাটা এগিয়ে দিবে ঘন ডালের বকুলতলায়।




পূর্নিমায় রুপকথা 

১১ মে ২০২২, প্রথম প্রহর