Thursday, July 18, 2024

লোকালয়ের গল্প

লোকালয়ের গল্প (ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত) 
 

লোকালয়ের সবচেয়ে জমজমাট অবস্থানে রাজ ঘোষক ঢেঁড়া পেটাতে পেটাতে সৈন্য পাহারায় আগমন করছেন। বাধান বুড়ো বটগাছের তলায় দাঁড়িয়ে ...

ঘোষক : শোনো, শোনো, শোনো। মহারাজের নিকট সূর্যদেবের দূত জানিয়ে গেছে "আগামীকাল হতে, সূর্যদেব এক প্রহর পরে আসিবেন এবং এক প্রহর আগে প্রস্থান করিবেন।" যার কারণে দিনের আলো এখন থেকে কম পাওয়া যাবে। যার যা কাজ তা এই সময়ের মধ্যেই শেষ করতে হবে। এ নিয়ে মহারাজের কাছে কোন আপত্তি করা যাবে না।

ঘোষক আর পাইক পেয়াদাদের প্রস্থানের পরে নাগরিকরা নিজেদের মধ্যে কপালে ভাঁজ তুলে চিন্তিত ভঙ্গিতে আলাপ শুরু করলো।
নাগরিক ১ঃ এটা কেমন হলো! দুই প্রহর আলো না থাকলে কাজ-কম্মের কি গতি হবে। আমার  
                           গরুগুলোকে মাঠে নিয়ে যাবো কখন আর আনবো কখন!
নাগরিক ২ঃ আরে দাদা, তুমি আছো গরু নিয়ে! সূর্যদেব যে দুই প্রহর আসবেন না, এর কারণ কি 
                           হতে পারে সেটা আগে বের করা দরকার। বলি হঠাৎ এই ক্ষোভের কারণ কি?
❊❊নাগরিক ৩ঃ কারণ আর কি হবে! দেখ, কেউ নিন্দা করেছে সূর্যদেবের নামে আর অমনি নারদমুনি 
                            টুক করে কথা লাগিয়ে বসে আছে।
নাগরিক ৪ঃ আরে ভাই, দেবতার নামে নিন্দা! এও আবার হয় নাকি! 
❊❊নাগরিক ৩ঃ কেন হবে না! মহাদেবের নামে কত কথা, গাঁজা খায়, ছাই ভস্ম মাখে, শ্মশানের                                     মরাগুলো তার পেটে ঢোকার কথাও তো কম শুনি নি। ব্রহ্মও তো শুনি খুব রসিক আছে।
                         আর ইন্দ্র দেবের রাজ সভার কথা... না থাক! তা এই ত্রিদেবের নামে যদি এত কথা থাকে
                         তো সূর্যদেবের চুটকি ছড়াতে কতক্ষণ।
নাগরিক ২ঃ তাই বলে কে না কে কি বলেছে আর সবার উপর এমন চড়াও হয়ে দাঁড়াতে হবে!
❊❊নাগরিক ১ঃ আমার মনে হয় অন্য কিছু। এই ধরো, আমরা যে মাসোহারা দেই, মানে ওই পূজা 
                            আর্চায় যা করি আরকি। তাতে তিনি তুষ্ট নন মনে হচ্ছে।
নাগরিক ৫ঃ না ভাই, সে তুমি বলতে পারো না। ওই সক্কালে ঘুম থেকে উঠে সূর্য প্রণাম না করে 
                            আমরা কেউ ঘর ছাড়ি না। আবার সপ্তাহের শুরু, মাসের শেষ, ফসলের প্রথম মুষ্টি সব 
                           কিন্তু এ রাজ্য সূর্যদের স্মরণে আর বাৎসরিক নামাবলি আয়োজনের কথা বলার কি 
                            আছে, সে তো সাত রাজ্যের কান ফাটিয়েয়ে করা হয়।
❊❊নাগরিক ৪ঃ  সবই তো বুঝলাম। কিন্তু দিনের আলো না পেলে আমাদের মাঠের ফসল, গোয়ালের 
                        গরু, উঠানে গবাদি বা আমাদেরই কি হবে। বেশি অন্ধকারে পিলে চমকানো রোগ হয়, 
                        ঘরবাড়ি স্যাঁতস্যাঁতে থাকলে হাঁপানি, জামাকাপড় না শুঁকলে চুলকুনি, অতিরিক্ত আলোর 
                        জন্য জ্বালানি, না ভাবতে পারছি না!!!

হঠাৎ আড্ডায় আগমন আরেক নাগরিকের। সে আবার দীর্ঘ সাধনায় ভগবানের আশীর্বাদে অজ্ঞাত জ্ঞানের মালিক। লোকে তাকে ধরলো সূর্যদেবের এহেন সিদ্ধান্তের কারণ কি? লোকেদের কপালের ভাঁজ দেখে সে পরদিন জানাবে বলে চলে গেল। লোকেরাও মাথা নাড়তে নাড়তে চলে গেল কোন কিনারা না করতে পেরে।

🌞
পরদিন সূর্য উঠল কথা মত এক প্রহর পরে। লোকেরা ছুটলো সেই অজ্ঞাত জ্ঞানের মালিকের কাছে। জানতে হবে, কারণ কি আর প্রতিকারই বা কি?

নাগরিক ৬ঃ (খানিক থমথমে গলায়) সূর্য দেবের তেজ খানিক কমে গেছে। যার কারণে বেশিক্ষণ                                 তোমাদের  দেখভাল তিনি আর করতে পারছেন না।
❁❁সমবেত নাগরিক : কিন্তু এ কি করে সম্ভব! দেবতার তেজ কমে কি করে?
নাগরিক ৬ঃ কমে কমে। তোমাদের পুজোর তুষ্টিতে তিনি এমন ঘুমিয়েছেন প্রতিদিন যে তার
                               শরীরে মেদ বাড়ায় নড়াচড়া কমে গেছে। নড়া চড়া কমে যাওয়ায় শরীরে বাসা 
                              বেধেছে নানান রোগ। আবার তোমাদের ভোগে কেউ এত তেল, এত ঘি, এত মাখন 
                              দিয়েছো যে তাতে তার শরীরের ধমনিগুলো বন্ধ হয়ে প্রায় মরবার উপক্রম। এ  
                              অবস্থায় তার এই সামান্য নড়াচড়াও বিস্ময় ছাড়া কিছু না।  
❁❁সমবেত নাগরিক : তাহলে এখন করণীয়?
নাগরিক ৬ঃ সকলে যজ্ঞ শুরু কর, নতুন কেউ সূর্য দেবের দায়িত্ব না নিলে এর প্রতিকার নেই
                             (খানিক থেমে, চিন্তার সীমা চরমে তুলে, আরো গম্ভীরর ভাবে) আবার শুনছি,
                             পবন দেবের শরীরও ভালো যাচ্ছে না। কবে না আবার বাতাস বন্ধ করে বসেন, তাতে 
                            তো প্রাণ সংহার নিশ্চিত।
নাগরিক ৪ঃ... কিরে, রাজ ঢেড়ার আওয়াজ শোনা যায় মনে হচ্ছে...

(দূর থেকে ঘোষকের ক্লান্ত গলা শোনা যাচ্ছে)
শোন, শোন, শোন। গত রাতে পবন দেবের দূত মহারাজের.................. 



 ঢাকা, ২১.০৭.২০২২

No comments:

Post a Comment