Saturday, July 27, 2024

যেমন ছিল-২

🔴কিছু দিন পর🔴

কমলা বাইজীর নতুন গানে মত্তো মহারাজা। আমোদের আসরে সব মহাজনেরা বেশ সুখেই সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত পার করছে। দেখা গেলো, আসরের কোনায় দাঁড়িয়ে রাজদূত মিটিমিটি তাকিয়ে আছে মহারাজের দিকে। কিছু বলবে সেই সাহসের জোগাড় আর হচ্ছে না। চোখ পড়লো মহারাজের, কাছে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন এই উৎসবে উদাস বদনের হেতু কি?

রাজদূত: মহারাজ, প্রধান সেনাপতি রাজকোষের যে চুরি করেছেন, এটা প্রজারা জেনে গেছে। সেনাপতিকে আপনি কিছু বলেননি জেনে এখন তারা জানতে চায়, চুরিতে আপনার ভাগ কতটা ছিল। এই নিয়ে রাজ্য জুড়ে শোরগোল চলে।

মহারাজ: শোন দূত, তোমাদের বলতে বলতে হাপিয়ে গেলাম। এই সন্ধ্যাকালে এমন আলাপ করবে না। সারাদিন এই মন্ত্রীদের খ্যাচড়খ্যাচড় শেষে সন্ধ্যাটা আমার ভালো কাটে, সেটাও তোমাদের সহ্য হয় না! তা আর কি বলে তারা বলে ফেলো, মধ্যরাতে আমার আবার কিছু বন্ধু রাজাদের সাথে দরবার আছে। তার আগে মেজাজ ঠিক করা চাই। আর সেনাপতির চুরির ভাগ আমি নিবো কেন, রাজকোষটাই তো আমার!

রাজদূত: মহারাজ, এই কথা বলেছিলো খাজাঞ্চি। এর পরে যে রামদলাই দিলও তাকে, তা চোখে দেখা যায় না। তারা এখন স্লগান দিচ্ছে, "জনগণের খাজনায়, ফূর্তী করে কোন রাজায়" ।

মহারাজ : (ক্রোধে পাগল হয়ে) তোদের সব কয়টাকে লাথি দিয়ে রাজ্য ছাড়া করা উচিত। আমারই রাজ্যে থেকে আমার নামে উলটাপালটা স্লোগান দেয় আর তোরা সব বসে থেকে মাথা নেড়ে চলে আসিস। কোন ফকিরগুলো স্লোগান দিচ্ছে তুলে নিয়ে গুম করে দে। আমার ভিন্ন রাজ্যের বন্ধুরা আসার আগেই আমি সবকিছু শান্ত দেখতে চাই।

মহারাজের ধমক আর গালিগালাজ কোন রকমে সহ্য করে সভা ত্যাগ করে রাজদূতসহ রাজার বিশেষ বাহিনী প্রধান। জনগণের ক্যাঁচক্যাচানি আবার মহলে গেলে মহারাজের চোখ রাঙ্গানি, যায় কই বাহিনী প্রধান! এবার সে সিদ্ধান্ত নিলো, যে করেই হোক না কেন, এমন চলতে দেয়া যাবে না। সুতরাং বিশেষ বাহিনীকে সে এবার নির্দেশ দেবে, "যে কটা মরে মরবে, যে কটা পঙ্গু হয় হবে, যত খুশি রক্তঝড়ার ঝরবে কিন্তু রাজমহলের আশেপাশে তো বটেই কোন বাজারে কিংবা রাজপথের আশেপাশে কোন প্রজাদের ভিড়তে দেয়া যাবে না। যেমন ভাবনা তার তেমন কাজ। মাত্র দেড় প্রহুরে সব স্লোগানের মুখ বন্ধ, এমনকি রাস্তার কুকুরগুলোও কুঁইকুঁই শব্দ করার সাহস পাচ্ছে না।
এদিকে রাজঝাড়ুদার সব পথে নেমে গেলো রাস্তা পরিষ্কার করতে। গলে যাওইয়া মাথার খুলি, ছিড়ে পরা কানের টুকরো, ভেঙে যাওইয়া হাতের কব্জি সাথে থিকথিকে রক্ত যেন দেখা না যায় তার ব্যবস্থা করতে। সন্ধ্যা নাগাদ রাজার বন্ধুরা সব আসছে বিশেষ বৈঠকে।

সব দেখে সীমান্তমন্ত্রী, দেশমন্ত্রী, সেনাপতি, বিশেষ বাহিনী প্রধানসহ রাজদূত আর চাটুকারের দল চললো রাজদরবারে। এমন দুর্দান্ত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে বিশ্বজনীন না করলে যে অপরাধ হবে তাদের, সেই সাথে একটা কুর্নিশে যতটা বকশিশ মেলে তা হাতছাড়া করা যাবে না...

রাজপ্রাসাদ তখন পুরো জ্বলজ্বল করছে রঙিন আলোয়, অতিথিদের আনাগোনা বাড়ছে, বাড়ছে আমোদ প্রমোদের জোগান। শুরু হবে বিশেষ বৈঠক বিদেশি রাজাদের সাথে…

চলবে…

পর্ব-২: ২৭.০৭.২০২৪, রাজশাহী

No comments:

Post a Comment