❝আজি এই সন্ধ্যাবেলা
আমায় ডেকো না,
লোকে যদি দেখে তবে
বদনামে কূল ভাসাবে
চোখ আড়ালে ফিরে পাব না…❞
দরবারের মাঝে বসে সুরেল কণ্ঠে সবে গান ধরেছে কমলা বাই, ঠিক তখনই মূর্ছনার মাথায় মুগুর মেরে হন্তদন্ত হয়ে, একে তাকে ডিঙিয়ে ঢুকে পরলো সেনাপতি।
সেনাপতি: মহারাজ! মহারাজ! আর পারছি না, এবার আপনি কিছু করুন….
মদিরের নেশা ছুটে যাওয়ার চেয়ে এই মুহূর্তে মহারাজ ভূপেনন্দ্রনাথের কাছে বিরক্তিকর আর কিছুই নেই। নেশা কেটে গেলো, মূর্ছনা ভেঙে গেলো পারলে এবার মুণ্ডটা না আবার ভোগে যায়।
মহারাজ: ধ্যাত! (চরম বিরক্তি আর ক্ষোভ নিয়ে) এই হলোটা কি! তুমি কি আমাকে দু দণ্ড বাঁচতে দিবে না নাকি! তোমার জ্বালায় কি আমি রাজ্য ছাড়বো নাকি তোমাকে ছাড়া করবো সেই বিহিত এখনই বোধহয় করতে হবে। এই, এই সীমান্ত মন্ত্রী, এইটাকে এক্ষুনি নিয়ে যাও, এক্ষুনি…
সীমান্ত মন্ত্রী: (খানিকটা বিব্রত হয়ে) এক্ষুনি নিয়ে যাবো মহারাজ। তবে বলছিলাম, এইভাবে ঢুকে যখন পরেছে একবার শুনুন কি বলতে চায়।
মহারাজ : (মন্ত্রীর দিকে চোখ রাঙিয়ে) সবকটি হয়ে এক গোয়ালের, কে কার হয়ে সাফাই গাইবে তারজন্য মনে হয় কথা মুখে লেগে থাকে। তোমাকেও ওই জঙ্গল পার পাঠাতে হবে। এই খচ্চর, বলো, গাধার মতো লাফিয়ে আসলে কেন, বলো?
সেনাপতি: (কাঁচুমাচু করে) মহারাজ, আপনি গতকাল সভায় সব প্রজাদের মূর্খ বলেছিলেন। সেকথা তারা জানার পর মিছিল করে জানতে চায় আমাদের মহারাজ কতটা শিক্ষিত। পিটিয়েও কাউকে সরানো যাচ্ছে না।
মহারাজ: (তাচ্ছিল্যের সাথে) তোমাদের নিয়ে পারি না আমি, এই সামান্য বিষয়ে এতটা অস্থির হলে চলবে! এই শিক্ষামন্ত্রী, তুমি কালই এক জনসভার আয়োজন করবে, সেখান থেকে আধুনিক শিক্ষার রূপকার হিসেবে আমাকে বিশেষ সম্মাননা দেবে আর খাদ্যমন্ত্রী, তুমি আজ রাতের মধ্যে বাজারে খাদ্য সংকটের নামে সব কিছুর দাম বাড়িয়ে দিবে। বাজারের চিন্তায় মূর্খদের আর কিছু মনে থাকবে না, সাথে সম্মাননা অর্জন ভেবে আমার যোগ্যতা নিয়ে কেউ কথা বলবে না।
মহারাজের আদেশে শিক্ষা আর খাদ্যমন্ত্রী কাজে নেমে গেলো এবং যা হওয়ার তাই হলো, দুটো পয়সার জন্য মানুষ এত ব্যস্ত হয়ে পরলো যে কোন কিছুই মনে পরে না কারো।
চলবে…
(পর্ব-১: ২৫.০৭.২০২৪, রাজশাহী)
No comments:
Post a Comment