Thursday, December 21, 2023

নোটবুক-১

 


প্রথম কিছু লিখেছিলাম সম্ভবত যখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ি, তারপর একগাদা কাগজ হিজিবিজি দিয়ে ভরিয়ে ছিলাম দ্বাদশ পর্যন্ত। একদিন হঠাৎ কি মনে করে সব পুড়িয়ে ফেলি। প্রথম বার আমার লেখালেখি নিয়ে কেউ সিরিয়াস নোট দিলো, ছোট চাচা মিল্টন। “এইসব হিজিবিজি তোর লেখার ভিত ছিল, নষ্ট করাটা ঠিক হয় নি”- চাচ্চু বললো, “নিজেকে বুঝতে আর নিজেকে অতীত আয়নায় দেখতে পুরোনোকে ছাড়তে নেই, লেখা তো কখনোই না”।


আজ পেলাম অনেক বড় দুটি কমপ্লিমেন্ট, সহজ বাংলা সম্ভবত প্রসংশা, কিন্তু কথাগুলো আরো বেশি ছিল।

সাকিদার স্যার বলে বসলেন, ক্ষুধা নিয়ে বাংলা ভাষায় তার পড়া কবিতার মধ্যে ৪ জনের নাম তিনি মনে রাখেন সব সময়। 

১/ কাজী নজরুল ইসলাম 

২/ রফিক আজাদ

৩/ সুকান্ত ভট্টাচার্য 

৪/ আমি, মাসুক


শিশির শেষ লেখাটা পড়ে দুটো বাক্য বললেন, যা অনেক দিন বাদে কাগজ বুকে টেনে নিতে বাধ্য করবে। “আপনার লেখা পড়তে ভয় করে, কান্না থামাতে পারি না”, 

সাকিদার স্যারের আর শিশিরের কথাগুলোতে মনে হচ্ছিল এইবার লেখাগুলোকে কবিতা বলে ঘোষণা করি। আমি আমার লেখাগুলোকে নিজেই কখনো কবিতা বলে ডাকি নি, পাঠকের জন্য ছেড়ে দিয়েছি। তাদের ইচ্ছায় ছোটগল্প, কবিতা, হিজিবিজি, আঁচড় যা ইচ্ছা বলতে পারে। তাদের সাথে আমার কথা সংযোগ হোক এটার চেষ্টা করে গেছি। 

আমি শব্দ শ্রমিক, মনের নকশায় নির্মাণ আমার কাজ। নির্মাণ নির্বাচন, সে যারা পড়েন তাদের জন্যই থাক....

Wednesday, December 20, 2023

সেলাই কারখানা



বাড়ির লোকেরা জানে,

কংক্রিটের শহরে সেলাই কারখানায় কাজ করে সে।

এই পরিচয়ের আড়ালে কত নিপিড়ন লুকিয়ে 

শহরের অলিতে-গলিতে কাপড়ের ভাঁজে গল্পের পাঁপড়ি খোলে।


বাড়ির লোকেরা জানে,

কংক্রিটের শহরে সে সেলাই কারখানায় কাজ করে।

টিফিনের ফাঁকে স্কুলের  বেঞ্চে খালি পেটের গল্প কেউ কানে না নিলেও

পাঁচটাকার সিঙ্গাড়ার জন্য একবার ভাতের চাল চুরির গল্প হয়েছিল পাড়ার প্রধান বিষয়। 

সিলিং থেকে ঝুলে পরতে চাইলো সেই পঞ্চম শ্রেণিতেই।


বাড়ির লোকেরা জানে,

কংক্রিটের শহরে সেলাই কারখানায় কাজ করে সে।

কুড়িয়ে নেয়া আমের দাম নিতে গিয়ে

সমাজের খাতায় প্রথম নাম লেখালো নষ্ট মেয়ের তালিকায়। 

মেয়েরা নষ্ট কেন হয়, এই উত্তর খুজতে গিয়ে শৈশব শেষ। 

নষ্ট মেয়ের কান্নার বয়স যদিও পৃথিবীর সমান, 

কিন্তু কান্নার জলে মাটি ভেজে না।



বাড়ির লোকেরা জানে,

কংক্রিটের শহরে সেলাই কারখানায় কাজ করে সে।

সেলাই কারখানায় কোন পোশাক তৈরি হয় না,

ছিবড়ে যাওয়া জরায়ু মেরামতে নতুন দিনের রাস্তা খোঁজে। 

সেলাই কারখানার মেঝেতে ছিপিখোলা মদের বোতল 

বোতলের তরল গড়িয়ে পিচ্ছিল মেঝে

মেঝেতে বিবস্ত্র সেলাই শ্রমিক 

কিন্তু তার চোখে নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়া প্রেম 

বিন্দু বিন্দু জমে থাকা ঘামে বাবার ওষুধের টাকা আর ছোট বেলার বেদম মার

কুড়াতে থাকা অন্তর্বাসের ছায়ায় মায়ের জন্য শাড়ি

মুছে যাওয়া লিপিস্টিক সারাই করতে যাওয়ার আগে ভালো থাকার ইচ্ছা


এই শহর জানে না কেন নষ্ট মেয়েরা ভিড় করে?

বাড়ির লোকেরা জানে না,

কেন মেয়েরা নষ্ট হয়?

কেন সেলাই কারখানার শ্রমিক হয়?

বাড়ির লোকেরা জানে,

সে কংক্রিটের শহরে সেলাই কারখানায় কাজ করে।


সেলাই কারখানা 

১৯ ডিসেম্বর ২০২৩

সাতমাথা, বগুড়া

Friday, December 1, 2023

অপ্রয়োজনীয় স্মৃতি (অণুগল্প-২)



ছিপছিপে শ্যামল বর্ণ মেয়েটির কপালের মাঝ বরাবর একটা ছোট্ট নীলাভ টিপ। অজান্তে এক মিছিলে শ্লোগান, অজান্তেই পাশকাটিয়ে চলে যাওয়া। অপ্রয়োজনীয় ভঙ্গিতে ভুলে যাওয়া, তার কাজল চোখের নরম আহুতি। 

অনন্তকাল পরে, চির চেনা জগতের পাড়ে আনমনে হাঁটতে গিয়ে তার ছাঁয়ায় বিষ্ময়। এলোপাতাড়ি দিনগুলোর শুরু সেখানেই। ঠান্ডা বাতাসে আঁচল ধরা, গল্পের ঝুড়িতে প্রতিখনে পাঁপড়ি মেলা, বৃষ্টি এলে চোখ লুকানো, আরো কতো কি। অপ্রয়োজনীয় স্মৃতির শ্যামা মেয়ে যে কখন অনেকগুলো সময় দখল করে নেয়, সেই নীলাভ টিপটাও জানতে পারে না।



অপ্রয়োজনীয় স্মৃতি

৯ এপ্রিল ২০২২

বোদা, পঞ্চগড়