বাড়ির লোকেরা জানে,
কংক্রিটের শহরে সেলাই কারখানায় কাজ করে সে।
এই পরিচয়ের আড়ালে কত নিপিড়ন লুকিয়ে
শহরের অলিতে-গলিতে কাপড়ের ভাঁজে গল্পের পাঁপড়ি খোলে।
বাড়ির লোকেরা জানে,
কংক্রিটের শহরে সে সেলাই কারখানায় কাজ করে।
টিফিনের ফাঁকে স্কুলের বেঞ্চে খালি পেটের গল্প কেউ কানে না নিলেও
পাঁচটাকার সিঙ্গাড়ার জন্য একবার ভাতের চাল চুরির গল্প হয়েছিল পাড়ার প্রধান বিষয়।
সিলিং থেকে ঝুলে পরতে চাইলো সেই পঞ্চম শ্রেণিতেই।
বাড়ির লোকেরা জানে,
কংক্রিটের শহরে সেলাই কারখানায় কাজ করে সে।
কুড়িয়ে নেয়া আমের দাম নিতে গিয়ে
সমাজের খাতায় প্রথম নাম লেখালো নষ্ট মেয়ের তালিকায়।
মেয়েরা নষ্ট কেন হয়, এই উত্তর খুজতে গিয়ে শৈশব শেষ।
নষ্ট মেয়ের কান্নার বয়স যদিও পৃথিবীর সমান,
কিন্তু কান্নার জলে মাটি ভেজে না।
বাড়ির লোকেরা জানে,
কংক্রিটের শহরে সেলাই কারখানায় কাজ করে সে।
সেলাই কারখানায় কোন পোশাক তৈরি হয় না,
ছিবড়ে যাওয়া জরায়ু মেরামতে নতুন দিনের রাস্তা খোঁজে।
সেলাই কারখানার মেঝেতে ছিপিখোলা মদের বোতল
বোতলের তরল গড়িয়ে পিচ্ছিল মেঝে
মেঝেতে বিবস্ত্র সেলাই শ্রমিক
কিন্তু তার চোখে নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়া প্রেম
বিন্দু বিন্দু জমে থাকা ঘামে বাবার ওষুধের টাকা আর ছোট বেলার বেদম মার
কুড়াতে থাকা অন্তর্বাসের ছায়ায় মায়ের জন্য শাড়ি
মুছে যাওয়া লিপিস্টিক সারাই করতে যাওয়ার আগে ভালো থাকার ইচ্ছা
এই শহর জানে না কেন নষ্ট মেয়েরা ভিড় করে?
বাড়ির লোকেরা জানে না,
কেন মেয়েরা নষ্ট হয়?
কেন সেলাই কারখানার শ্রমিক হয়?
বাড়ির লোকেরা জানে,
সে কংক্রিটের শহরে সেলাই কারখানায় কাজ করে।
সেলাই কারখানা
১৯ ডিসেম্বর ২০২৩
সাতমাথা, বগুড়া
No comments:
Post a Comment