উজবুক মুলুক নামক দেশের মানুষের একটা বড় অসুখ হচ্ছে চুলকানি। এদের মাথা চুলকায় সবচেয়ে বেশি, আরো বেশি চুলকায় নিম্নাঙ্গের পশ্চাদ্দেশ।
এই ধরেন বইমেলা, বৈশাখ, ফাল্গুন, নবান্ন, শ্রমজীবী নারী, ক্রীড়াবিদ নারী, আদিবাসী মানুষ ইত্যাদি অসুখে খুব চুলকায়। আবার ব্যাংক দখল অথবা লুট, ধর্ষণ, খুন, বিচারহীনতা ইত্যাদি অসুখে দিব্যি ভাত ঘুম চলে!
যা হোক, গল্পটা হলো একজন বিদেশে পর্যটকের ভ্রমণ শেষে প্রাণ হাতে দেশে ফেরার বা না ফেরার।
সেই দেশের উত্তর থেকে দক্ষিণে যেতে হলে যাত্রা করতে হবে আকাশ পথে। সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে পর্যটক গেলেন উত্তরে এয়ারপোর্টে, কিন্তু একি মুশকিল! অন্যান্য যাত্রী সাধারণ, যারা ডোমেস্টিক ট্রাভেল নিয়মিত করেন তারা সব জটলা করে কি সব স্লোগান দিচ্ছেন। মোটামুটি যা বোঝা গেলো, নিয়মিত যাত্রীরা পাইলটকে ভরসা করতে পারছেন না, জীবনের ঝুঁকি মনে করছেন তারা।
আগের পাইলট বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন জোটলা করা মানুষজন।
• বিমানের সরঞ্জাম চুরি
• যাত্রীদের সেবায় নিয়জিতদের দিয়ে যাত্রী হয়রানি
• বিমান সংরক্ষণের নামে লুটপাট
• যাত্রী সেবায় স্বজন প্রীতি
• অযোগ্য লোক দিয়ে বিমান পরিষেবা
কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের দাবি এই পাইলট সরিয়ে যাত্রীদের পছন্দ অনুযায়ী ব্যক্তিকে চালক আসনে বসাতে হবে।
পর্যটক মহাশয় মহাসংকটে! ভ্রমণ বাতিল করে দেশে ফিরবেন, তারও কোনো উপায় নেই। এই বিমানেই রাজধানী গিয়ে তার দেশের পথ ধরতে হবে।
অনেক ঝক্কি ঝামেলা শেষে যাত্রীদের পছন্দ মতো চালক পাওয়া গেলো। নির্ধারিত পোশাকে নতুন চালক উড়োজাহাজের চালক আসনে বসলেন। উড়োজাহাজের প্রথম রানআপ দেখে আশঙ্কা নিয়ে চুপ করে বসে থাকা পর্যটক কিছুটা স্বস্তি নেয়ার চেষ্টা করলেন। হালকা ঝাঁকুনি দিয়ে আকাশ পথে বিমান ছুটলো উজবুক মুল্লুকের দক্ষিণে। মিনিট কয়েক পরে তন্দ্রায় থাকা পর্যটকের মনে হলো বিমানটা বোধহয় এলোপাতাড়ি ছুটছে আর খুব কাঁপছে।
পর্যটকের সহযাত্রী, যিনি নিয়মিত ডোমেস্টিক পেসেঞ্জার'কে কিছু শংকাযুক্ত কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলেন "পাইলটের অভিজ্ঞতা কেমন?" সকলে যে সমাদরে তাকে বসালো, তাতে তো বিরাট অভিজ্ঞ আর দক্ষ।
সহযাত্রী বেশ উচ্ছ্বাস নিয়ে বলেন: কি মশায়, চেনেন না বুঝি। এ তো বিরাট দক্ষ আর অভিজ্ঞ লোক। প্রায় ৩৫ বছর ধরে চালকের আসনে। কত ঝড়, কত বিপদ মাথায় নিয়ে মানুষটা এই চালকের দায়িত্ব মাথায় নিয়ে আছে জানেন! চালক হিসেবে কত আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, অনুমোদন, কত পুরস্কার তার কোনো হিসেব নেই।
এবার খানিক আফসোস নিয়ে, প্রথম বার বিমান চালাচ্ছে জন্য কিছুটা ঝক্কি পোহাতে হচ্ছে। ২/৩টা খ্যাপ হয়ে গেলে আর সমস্যা হবে না।
পর্যটকের চোখ এতক্ষণে কপাল ছেড়ে মাথায় উঠার জোগাড়। এতদিন তাহলে কী চালিয়েছেন উনি! বিস্ময়ে প্রশ্ন।
সহযাত্রী বলেন, কি মুশকিল, আপনি দেখি কিছুই জানেন না! গুলিস্তানের বড় ওস্তাদের নাম জানেন না? এই দেশে উনার চেয়ে বড় লোকাল চালানো ড্রাইভার আর একটাও নাই। উনার অভিজ্ঞতায় দেশে বিদেশে কত আলোচনা করলেন। সেজন্যই সবাই মিলে উনাকে বসালো। দেখবেন ২/১ বার চালাইতে ঠিক হয়ে যাবে।
পর্যটক ততক্ষণে ঈশ্বরকে ডাকা শুরু করে দিয়েছেন। চোখ বন্ধ করে এক মনে অতীতের পাপ মোচনের জন্য ক্ষমা চাচ্ছেন ঈশ্বরের কাছে। ইশ, উজবুকের দেশে না এসে যদি নিজের ঘরেও মটকা খেয়ে ঘুমাতাম, তাহলে প্রাণটা অন্তত বাঁচতো।
হঠাৎ এনাউন্সমেন্ট আসলো ককপিট থেকে, “সম্মানিত যাত্রীবৃন্দ, আপনার অনেক আশা নিয়ে আমাকে এই দায়িত্ব দিয়েছেন কিন্তু আমি এটা কখনো করি নি। আমি কথা দিচ্ছি, দ্রুতই আপনাদের অবতারণ করাবো। আমার কথা হয়েছে কন্ট্রোল টিমের সাথে। আর তারপরও যদি না পারি, যদি আপনাদের মনে হয় আমি পারছি না। তাহলে এক্ষুনি চালকের আসন ছেড়ে আমি নেমে যাবো। আপনাদের বিমান আপনার যেমন ইচ্ছে বলবেন, তেমন চলবে….
এরপর পর্যটককে আর খুঁজে পাওয়া যায় নি। তার ডায়েরিতে এ পর্যন্তই লেখা ছিল। যার ফলে জানা গেল না শেষ পর্যন্ত বিমানটি অবতরণ করেছিল কিনা….
(বি:দ্র: এই গল্পটি দুর্বল মেরুদণ্ডের ও হালকা মগজের অলিক কল্পনা মাত্র। কাহারো চিন্তা বা কোন ঘটনায় মিলে গেলে তা নিতান্তই কাকতালীয় ভেবে উড়িয়ে দিয়েন।)
************************
উজবুক মুলুকে বিদেশে পর্যটক
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
পদ্মা তীর, রাজশাহী
No comments:
Post a Comment