Friday, April 23, 2021

হত্যার অবসান

শেখ মাসুকুর রহমান শিহাব 
সম্ভবত ঘুমন্ত মানুষের কোন পাপ থাকে না।
হত্যার তীব্র ইচ্ছা নিয়ে যখন ব্যক্তির মাথার পেছনে আমি
তখন তার নিথর ঠোঁট আমাকে নিয়ে কোন অযাচিত বাক্য ব্যবহার করছে না,
আমি আশ্চর্য হয়ে দেখছি তার চোখ
সেখান থেকে আমার দিকে বিষাক্ত তীর ছুটছে না।

সত্যি কি ঘুমন্ত মানুষের পাপ থাকে না!
আমি হত্যার আরো তীব্র ইচ্ছা নিয়ে লক্ষ্য করলাম
তার যে হাতের ইশারায় মিথ্যা অপবাদগুলো প্রায় সত্য হয়ে ওঠে
তা নিথর হয়ে পরে আছে,
সক্রিয় চক্রান্ত গুলো স্থবির হয়ে আছে তার ঘুমের চাদরে। 
যে পা একটু একটু করে পাপ বয়ে বেড়ায়
তাও অক্ষম ঘুমন্ত মানুষের কারণে। 

আচ্ছা, ঘুমন্ত মানুষের কি সত্যি পাপ থাকে না?
তবে পৃথিবীর সব মানুষ ঘুমিয়ে পড়ুক, 
চির নিদ্রায় চলে যাক সব অমঙ্গলের দল।
আমাদের হত্যা বাসনার অবসান ঘটুক।
কোলাহল মুক্ত পৃথিবী গেয়ে উঠুক সাম্যবাদী গান।

(২২ জুন ২০২০,বগুড়া)

আসুন, প্রশ্ন করি

শেখ মাসুকুর রহমান শিহাব
আমি যদি অসময়ে মারা যাই অথবা আত্মহত্যা করি 
তবে হে চিন্তাশীল মানুষগণ, কাকে দায় দেবেন?
কাকে জিজ্ঞেস করবেন আমার মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে?
কাকে প্রশ্ন করবেন, আপাত বোকা এই ছেলেটা কেন আত্মহত্যা করলো?

আপনারা কি আমার পরিবারকে দায় দেবেন?
যাদের সাথে আমার অবসর বা রাত যাপিত হয়েছে,
শুধু মাত্র দু'বেলা খাবার একসাথে খাই বলেই কি,
তারা আমার মৃত্যুর কারণ জানতে পারবে!
অথচ তারা চূড়ান্ত ভাবে অক্ষম আমার মস্তিষ্কের আলোড়ন জানতে,
সংসারের ঘানি টানতে গিয়ে মধ্যবিত্ত বা তার নিচের মানুষগুলো 
মানুষ থেকে কবেই ভারবাহী প্রাণীতে রুপান্তর হয়েছে তা তারা নিজেরাই জানে না।
তবে নিশ্চয়ই আমার পরিবার এটা জানে না,
কেন আমি মারা যাচ্ছি...


আপনারা কি আমার নিকটাত্মীয় বা বন্ধুদের জিজ্ঞেস করবেন? 
অথচ প্রচণ্ড ক্ষুধার সময় তারা কেউ জানতই না আমার অক্ষমতা। 
শেষ সন্ধ্যেবেলা আধখাওয়া সিগারেট টানতে গিয়ে পেটে যে প্রচণ্ড মোচড় উঠেছিল,
তা কোন বিলাশী খাবারের অম্বল নয় বরং ক্ষুধা।
সেই বন্ধুদের জিজ্ঞাসা করা কতটা ফলপ্রসূ হবে
যারা এটা জানে না যে, শীতে আমি কতমাত্রায় কম্পন অনুভব করবো।
তাহলে তারাও কি আমার মৃত্যুর দায় মুক্ত নয়...?

আপনারা কি অথর্ব ও আত্মবিস্মৃত রাষ্ট্রযন্ত্র এবং তার পরিচালকদের প্রশ্ন করবে?
সংবিধান অনুযায়ী যাদের দায়িত্ব ছিল আমার প্রতি,
আমার ক্ষুধা পেটে মোচড় কাটার আগে বা
শীতের কম্পন আমি মাপতে যাবার আগে এর ব্যবস্থা করা।
বিনা চিকিৎসায় মরবার আগে
শিক্ষা ব্যায় বহন করতে না পেরে ফাঁস নেবার আগে
বেকার হয়ে হতাশায় ডুবে মরবার আগে
সংবিধান (যা কিনা জীবনের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত), হ্যাঁ সংবিধান এই পরিচালকদের দেখ ভাল করার দায়িত্ব দিয়েছিল, তাদের প্রশ্ন করবেন?

আসুন না,
প্রায় মরে যাওয়া এই নির্বোধটার মৃত্যু নিয়ে
আপনাকে জিজ্ঞাসা করি।
নাগরিক হিসেবে অন্য নাগরিকের মৃত্যু দায় নিয়ে আপনাকেই না হয় প্রথম প্রশ্ন করি...



(২৭ জুন ২০২০, বগুড়া)

আবলতাবল দিন

শেখ মাসুকুর রহমান শিহাব

বিকৃতি আজ পরিবর্তন 
প্রপাগাণ্ডাও আন্দোলন, 
খনন মাঝে উন্নয়ন 
হাওয়ার কলে আটকে মন।

বিষ যেখানে হয় মধু
চলন বলন সব সাধু,
আটকে যায়রে রেল চাকা
চেয়ার পাল্টে লাউ কদু।

পাবলিসিটিই মুল কথা
চুল কপাল সব লোক দেখা,
খড়ের গাদায় সুই খোজা 
হাত তালিতে সাবাস দাদা।

বলি চায়ের কাপে উঠলো ঝড়
শহর জুড়ে এক আলাপ,
দাদারা সব হিরো হলেন 
শুনি খবর দিচ্ছে লাফ।

এঘর ওঘর করে পরছে রোল
দোকান টঙে গণ্ডগোল, 
দাদারা সব গঙ্গা পাড়ে
ধরবো বোয়াল উঠলো শোল।

কান্নাকাটি, 
না শুনলে আজ চিমটি কাটি,
গাল পুরে দে পানশুপোরী,
বলছি যে এক গল্প ভাড়ি।

মঞ্চ করে উঠলো ডেকে
দাদা ছাড়েন হুঙ্কার,
বিকৃতসব গপ্পোগুলো
গড়ছে দারুণ বাঙ্কার। 

এধার ওধার সবধারেতে 
গুছিয়ে বেশ পরিপাটি,
রশময়ের গপ্পো সাজাই
নাম যদিও নয় চটি।

আসল খবর দিলেই তো ভাই
মুখ বাঁকিয়ে পথ ধরো,
হুজুগ শুনে কান না খুঁজে 
আন্দোলনের পথ খোঁজ।

দেশ এভাবে চলছে বটে 
চলবে আরো বেশ কদিন,
হাওয়ার গাড়ি উড়ছে ভাড়ি
দম ফুরালেই শুধবে ঋণ।


(৩০ আগস্ট ২০২০, বগুড়া) 

Wednesday, April 21, 2021

ক্ষুধার্ত সংলাপ

(শেখ মাসুকুর রহমান শিহাব)

বড় রাস্তার মোড়ে উদ্ভ্রান্ত এক যুবক আচমকা আমায় প্রশ্ন করলো,

“বলতে পারেন সবচেয়ে বড় ঈশ্বর কে?”
আমি হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে আমতাআমতা করে বললাম,
“এই ধরুন ইসলাম ধর্ম বলে আল্লাহ,
ঈশায়ীরা আল্লাহকে মানলেও সাথে যীশু,
হিন্দুর বলেন মহেশ্বর.... ”
আমাকে থামিয়ে দিয়ে যুবক বললো
“আপনার কাছে সবচেয়ে বড় ঈশ্বরের নাম জানতে চেয়েছি”।

এরপর অনেকগুলো রাত আরাধনা করেছি,
একেরপর এক ধর্মগ্রন্থগুলোর পৃষ্ঠা শেষ করেছি,
সেজদা থেকে শুরু করে চার্চের মোমবাতি ঝড়িয়ে চলেছি
তবু বড় ঈশ্বরের নাম জানা হলো না।

উদ্ভ্রান্ত যুবকের এমন আজগুবি প্রশ্ন ভুলতে বসেছিলাম দিনকতক পরে।
পেছন থেকে অট্টহাসির মতো আওয়াজে কে যেন প্রশ্ন করলো,
“কি, খোঁজ পেলেন বড়ঈশ্বরের?”।
হকচকিয়ে দেখি যুবকটি একগাল হেসে তাকিয়ে আছে।
উচ্চস্বরে সে বললো, জানি পারবেন না
অথচ রোজ আরাধনা করেন সেই ঈশ্বরের,
তার খোঁজে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ নাকাল হয়ে যায়,
প্রতি রাতে তার নামের প্রার্থনা কুড়েঘর থেকে অট্টালিকা পর্যন্ত।
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ঈশ্বরের নাম ভাত....


শেখ মাসুকুর রহমান শিহাব,

সাতমাথা/বগুড়া

১৮/১১/২০২০

Saturday, April 17, 2021

অনিমেষের চিঠি-৩

(শেখ মাসুকুর রহমান শিহাব)


কন্যা, 

আজ তোমায় অসাধারণ দেখাচ্ছিল। বহু বছর পরে দেখছি বলে মনে হচ্ছিলো। তোমার কথা বলার ধরন বুঝতে দিচ্ছিলো না, আসলে কি চাও তুমি। সবতো শেষ করেছি, আর কি দেই। সবতো শেষই করলে। আকাশে মেঘ দেখে তোমার মনে পরলো একছড়া কদম ফুলের কথা, শেষ বর্ষায় তোমায় দিয়েছিলাম। আমিতো ভুলতেই বসে ছিলাম, তুমি আবার কেন জ্বালাচ্ছো!

কন্যা, আজ তুমি কদম খুজছো সৌখিনতায়। কিন্তু তুমি হয়তো ভুলে গেছো এই অলস সময়ের জন্যই পথ দুটো হয়ে গেছে।
নীল জিন্স আর টি শার্ট পরে কাক ভেজা মূহুর্ত আমিও ভুলিনি। কিন্তু কদম ছিঁড়তে ও পথে আমি আর পা বাড়াতে চাইনা। আজ যখন তুমি কদম ছিঁড়তে চাচ্ছো তখন কতো কমল পাপড়ি পায়ে পিষে যাচ্ছে তাকি তোমার খেয়ালে আছে! পথের পাশে গাছতলায় তোমার-আমার পায়ে পিষে যাচ্ছে কতো?
গতসন্ধ্যার বৃষ্টিতে বেরিয়েছিলাম, একগাছা কদম হাতে নিতে খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো। তোমায় ভাবছিলাম কিছুক্ষণের জন্য। হাতে বকুলের চুড়ি, বেলীর দুল, মাধবীলতার খোঁপা, সবুজ ঘাসের পায়েল আর করবী ঝুলানো নীলকাঞ্চনের মালা। পরনে ছিল সাদা শাড়ি, বর্ষা আরেক ফুল যেন হয়ে উঠছিলে। আমি কি তোমার চিন্তায় ডুবে যাচ্ছি! না বরং আসল কথাই বলি।
কন্যা, পাহাড়ের মাথায় মেঘে ধোয়া কদম দেখেছো! তোমার কল্পনার চেয়ে সুন্দর। পাহাড়ে ক্যান্টনমেন্ট দেখেছো? কদম গুলো চাপা পরছে ওর শক্ত বুট জুতার নিচে। আমার ভালোবাসার পাপড়ি যে ভাবে তুমি মুচড়েছো, ওরা সেভাবে পাহাড় মোচড়ায়, পাহাড়ের শান্তি মোচড়ায়, নীলকাঞ্চন মোচড়ায়, মেয়ে মোচড়ায় আর কদম মোচড়ায়। ওরা শুধু পাহাড়ে না, সমতলের গাছ কাটছে, পায়রাদের বুকে গুলি করছে, বকুল তলায় উঁই দিচ্ছে আর মাধবীলতা উপড়ে দিচ্ছে।
তুমি যে কদম ফুলের বায়না ধরেছো, তা তোমার হাতে থাকবেতো! আমি যে তোমার হাতের, হাতের ফুলের, ফুলের পাপড়ির, পাপড়ির রেনুর জন্য যুদ্ধে নেমেছি তা তুমি বুঝলে না কন্যা। আমার সাধের সন্ধ্যামালতি তুলে ফেললে, বললে তোমাকে নাকি মশায় পেয়েছে।
কন্যা, আমি এখনো তোমার হাতে বকুলের চুড়ি, বেলীর দুল, মাধবীলতার খোঁপা, সবুজ ঘাসের পায়েল আর করবী ঝুলানো নীলকাঞ্চনের মালার জন্য লড়াই করছি। তুমি আমার বাকি সন্ধ্যামালতি সহ নয়নতারা গুলো তুলে ফেলো। আমি না হয় আরেকটা কদমের চারা পুতে দেবো।

ইতি,
অনিমেষ

Friday, April 16, 2021

পোড়া ঘর

(শেখ মাসুকুর রহমান শিহাব)
আগুনে পুড়লে নাকি খাঁটি হয়?
লোহা, সোনা, রুপা পিতল সব নাকি খাঁটি হতে আগুনে পোড়ে।
মানুষ আগুনে পুড়লে কি হয় জানেন?
বস্তির ঘর, শেষ সম্বল, সস্তায় কেনা সাধের লাল শাড়ি?
জানেন?
রাস্তার পাড়ে লম্বা লম্বা দালানগুলানে আগুন লাগে না,
কাঠ, খড়, পলিথিন আর ভাঙ্গা টিনের বস্তিতে আগুন লাগে কেন? জানেন?

গরিবের রক্ত পোড়ে,
হ, গরিবের রক্ত পোড়ে জন্যই ঢাকার শহরে আসমান সমান দেয়াল উঠে,
রক্ত-ঘাম-শরীর পোড়ায়েই রিক্সা নিয়ে শখের শহরে ঘোরে প্রেমিক জুগল,
গরিবের বয়স পোড়ে জন্যই সোনালী রঙের সাজ উড়ে বেড়ায় মরার শহরে, 
এই শহর আরো সোনালি করতেই কি গরিবের বস্তি পোড়ে?

ছাই হয়ে যাওয়া স্তুপের মধ্যে থেকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে আনে শেষ সম্বল, 
পেট তো সহ্য করে না, ঘরের আগুনে ক্ষুধার আগুন মরে না।
পুড়ে যাওয়া আঁচল শুকায় না,
ছাই দিয়ে শরীর ঢাকে না,
স্বপ্ন পরে থাকে 
ছাই চাপা চোখে স্বপ্ন দেখা যায় না।

বস্তিগুলাতে কেন আগুন লাগে জানেন? 
হাড় মাংসের মানুষ থাকলেও ভাঙ্গাচোরা ঘরে সামাজিক প্রভুরা থাকে না।

(২৪ নবেম্বর ২০২০, বগুড়া)