Wednesday, April 27, 2022

সমর্থক শব্দে বন্দী

কেউ একজন খুব কাছে থেকে দেখছে আমাকে,
তার নিশ্বাসের আওয়াজ প্রতিক্ষণ অনুভব কতছি,
প্রতি মূহুর্তে তার চোখে আকুতি তাড়া করে ফেরে সময়,
কেঁপে ওঠা তার আঙুলগুলো স্পর্শ আমার কাঁধে।

এমন মানুষ যখন শুধু অজানা আশঙ্কায় ভুলে যেতে চায়,
যখন চায় চুখ খুলে জানবো পুরোটাই একটা স্বপ্ন,
যখন চায় মরিচীকার মতো তাকে খুঁজে ফিরে অচেনা প্রান্তের।
ক্লান্ত সে আমি তখন শেষ বার পৃথিবীর কাছে জানতে চাই,
ব্যর্থতার উপমা কেন শুধুই আমি?

একটা সময় শূন্যের আহ্বানে বিলীন হবো।
চাইলেও সেই কাঁপানো আঙুল খুঁজে পাবে না আমার উষ্ণতা,
তবু সময়ের কাছে শুধু আক্ষেপ,
অসময়ে আহ্বান কেন আমাকেই কাতর করে তোলে?
কেন আমিই মহাকালের সেই ব্যক্তি, যাকে অসহ্যের মাঝে হাহাকার হয়ে বাঁচতে হয়!

ক্লান্ত হতে হতে একা আমি
ঈশ্বর নামক একাকীত্বের সমর্থক শব্দে রুপান্তরিত।

*******★******



সমর্থক শব্দে বন্দী
১৩ এপ্রিল ২০২২
বোদা, পঞ্চগড়



Thursday, April 21, 2022

এপিটাফের শ্যাওলা

সেসব কৃষ্ণচূড়া ঝরে পরার দিনগুলোতে
তুমি শপথের সাথী হয়েছিলে।
লাল কৃষ্ণচূড়াগুলো বিলুপ্ত হবার আগে আর একবার পাখিদের জন্য উড়ে যাবে
যুদ্ধ বিরতি শেষ হবার আগে শেষ চুম্বনে ভালোবাসার আলেখ্য অর্জিত হবে
বুকে আঁচড়ে পরা বুলেট আমায় ঘুমিয়ে দেয়ার আগে
তুমি স্বপ্ন হয়ে ছুটে যাবে চাষাদের গোলায়।

কৃষ্ণচূড়া ঝরে পরেছে,
বিলুপ্ত হতে হতে ফিরে আসা মৌসুমে লিকলিকে ডালগুলো আরেকবার ডাক দিয়েছে,
ডানা ভাঙা পাখিরা গ্রেনেড হাতে মার্চের জন্য সারিবদ্ধ,
আমার কবরের এপিটাফটাও শ্যাওলার পর্দায় তোমার চোখে পরে না।
অথচ,
শপথের সাথী, তোমার উল্লাস আমার মরা কংকালে কাঁপন লাগাবে বলে সুবজ ঘাসেরা উৎকণ্ঠিত।

যুদ্ধবাজ পৃথিবীতে আমরা একটা প্রেমের শপথে কণ্ঠ দিয়েছিলাম,
পৃথিবীর প্রতিটি কারখানার জীবিত যন্ত্র
বন্ধা জমিনের দুপায়ে টেনে বেড়ানো হাল
পারমাণবিক জলাশয়ে ভাতের আশা আঁচড়ে পরা দূর্বল জাল
পাকস্থলীহীন রুগ্ন হাতগুলো আমাদের প্রেমে সিক্ত হবার কথা ছিল।
ভালোবাসার জন্য কাতর পৃথিবীটায় তুমি বৃষ্টি নামাও।
তোমার রক্তে শোষণ নামের প্রাচীন মিথ করব খুঁজে নিক
নিষ্ক্রিয় বুলেটে রোপিত হোক চাষাদের জন্য ছুটতে চাওয়া স্বপ্ন।

আমি অপেক্ষা থাকবো
তোমার হাতের কৃষ্ণচূড়ায়
আমার এপিটাফের শ্যামল মুছে দেয়ার।

**************************
এপিটাফের শ্যাওলা
২০ এপ্রিল ২০২২
বোদা, পঞ্চগড়


Wednesday, April 20, 2022

কফিনের রঙ

আপনার মৃত্যুতে শোক ঘোষণা করা হয় নি,
কিন্তু নাগরিকদের চোখে কালো ছায়া ছিল দৃশ্যমান।
অসুস্থ পৃথিবীর কারণে
আপনার বিদায় যাত্রায় সমবেত হতে পারেনি প্রিয়জনের ঝাক।
কিন্তু পৃথিবী জুড়ে আপনার জন্য কত বর্গ মাইল চোখের জলে ভিজেছে,
তা হিসেব করা অসম্ভব।

জীবনের যে দর্শন আপনি শিখিয়ে গেছেন আমৃত্যু,
মৃত্যুর পরেও দেখিয়ে দিয়ে গেলেন
কতটা উদারতা আপনি ধারণ করতে পারেন।
যদিও আপনার প্রাপ্য সম্মানটা রক্ষা করে নি,
ধ্বজাধারী প্রতারকের দল।
অথচ তারাই পুরো শহর দাপিয়ে গেলো, আপনার সখ্যতার গল্পে।

বাতিঘর!
নাহ, এ শব্দে আপনাকে ছোট দেখাচ্ছে।
আপনার প্রখরতা আদিসৃষ্টি সূর্য বা তারচেয়েও বেশি।
যার কারণে আপনাকে ধারণ করা যায় না কোন বন্ধ হৃদয়ে।

কি দৃঢ়তায় আপনার পথচলা ছিল।
শহরের কৃষ্ণচূড়াগুলো রঙ হারিয়ে বিবর্ণ বন্ধু বিয়োগের বেদনায়।
সতেজ শোভিত বাগানের চেয়ে,
আপনার কফিনে ছড়িয়ে থাকা ফুলগুলো
কি মর্যাদায় উজ্জ্বল হয়ে উঠছিল।
প্রজ্ঞার এক মানদণ্ড নির্মিত হয়েছিল এই জনপদে।

বিদায় বেলার অন্ধকার কাটেনি সূর্যের সাথে।
গতিময় জীবনে শ্রোতের টান আসলেও আজো পেছন ছাড়ে নি আপনার প্রাচুর্য।

রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা না হোক,
আমাদের অন্ধকার কাটেনি শত প্রদীপে,
অনন্ত প্রাণ আপনার যাত্রায় ফিরে আসেনি আমাদের বাৎসল্য,
আর গল্পের ঝুড়িতে শিখে নিয়া “মানুষ হয়ে বেঁচে থাকা”র অর্থ।

***********

কফিনের রঙ
১৩ এপ্রিল ২০২২
বোদা, পঞ্চগড়।


নিষিদ্ধ না হোক মায়া

প্রেমে পরার জন্য কোন কারণ লাগে না।
প্রেমে পরার জন্য আসলেও কোন কারণ লাগে না।
এই ধরুন, আপনি একা হেটে চলছেন তীব্র রোদ মাথায় নিয়ে।
আকাশ আগুনে পুড়ে যাচ্ছে আপনার শীতলতা।
আপনি তখন পুড়ে যাওয়া ত্বকের প্রেমে পরতে পারেন।

হতে পারে,
হাটু জলে ধীর হয়ে আসা নদীতে
ছুটোছুটি করছে নাম না জানা কিছু পোনা মাছ।
গোড়ালি পানিতে ওদের বিরক্ত করতে ইচ্ছে হল আপনার।
খেয়াল করে দেখুন,
আপনি প্রায় মন্থর নদীটার প্রেমে পরে যাচ্ছেন।

গাছে একটিও পলাশ নেই।
ঝড়ে শুকিয়ে জ্বালানি হতে কিছু মাত্র বাকি।
সতেজ পলাশ অনেক দিন না ছুঁতে পারার বাসনা
আপনায় জাগতিক উল্লাসে বাঁধা দিতে পারে।
পলাশের প্রতি এই আক্ষেপটাও কি আপনার প্রেম না!

একদম বিপরীত একটা মানুষকে খুব কাছের মনে হতে লাগলো,
যাকে পাবার সম্ভাবনা তো দূরের কথা
বাসনাটাও হত্যা করতে হয়।
সে মানুষটাকে একটু একটু করে তবু আপনি গেঁথে নেবেন আপনার স্বপ্নে।
একদিন স্বপ্নের সেই মালা খুলে আপনি জানবেন,
সে আসলে শূন্য এবং এ শূন্যতায় আপনি ঈশ্বর হতে পারতেন।
এমন প্রেমের জন্য আসলেই কি কোন কারণ থাকতে পারে!
থাকতে পারে কোন নিষিদ্ধ অথবা হত্যা করার অভিলাষ!

********


নিষিদ্ধ না হোক মায়া
১০ এপ্রিল ২০২২ (প্রথম প্রহর)
মাটিডালি, বগুড়া।

ভালোবাসার চুড়ুই

প্রেম আছে, ভাই প্রেম?
ভাঙাচোরা, জং ধরা, তলাহীন প্রেম?
বাতিল প্রেম, নষ্ট প্রেম, অপ্রয়োজনীয় প্রেম?
ভালো দামে বেঁচে দিন ফেলে দেয়া প্রেম।

অপ্রয়োজনীয় অনুভূতির নিদারুণ যন্ত্রণায় কাতরানো আপনার প্রেমগুলো আমায় দেবেন?
হাজার বছরের প্রখরতায় শুকিয়ে আসা কণ্ঠের আকুতিতে,
আমি ফেরি করে আপনার প্রেম চাইছি।
মজা পুকুরের জমে ওঠা কচুরিপানার জমিনে
ফেলে রেখে নষ্ট করার চেয়ে,
আমার ঝুলিতে ফেলে দিন।

যন্ত্রমানবের নগরীতে বিলিয়ে বেড়ানোর জন্য প্রেমের বড় অভাব,
নিষিদ্ধ হবার আগে শেষবার ফেরি করে আশাবাদী হতে চাই।
নিদান পক্ষে কারাগার মুক্ত হোক
ভালোবাসার চুড়ুই।


***********
ভালোবাসার চুড়ুই
৫ এপ্রিল ২০২২
কল্যাণপুর, ঢাকা


কৃষ্ণচূড়ায় শূন্য অন্ধঘর

শূন্য ঘর, একটা অন্ধকার রাত
দমকা হাওয়ার সাথে স্মৃতির একপশলা উন্মোচন
বিষন্নতা, আক্ষেপ, অপ্রাপ্তির মগ্নতা
না দেখা জীবনের প্রতি তীব্র অবিশ্বাস
এই পৃথিবী, এই হারিয়ে ফেলা।

দুই এক বিন্দুতে বিলাসী কল্পনা
ছুঁয়ে ভুলে যাওয়ার অনিচ্ছা
অথবা কেবল ছায়া হাতে বৃষ্টি যাপন
একপথ, তবু দূরে দূরে সরে যাওয়া।

হরেক বনফুলে অলংকার
আলাপের ঝুলিতে হাতড়ে অপ্রয়োজনীয় প্রবচন
তবু, কথা হয়

সন্ধ্যার আকাশ, একা বসে থাকা
তাজা রক্তে সূর্য সাজানো
প্রয়োজন নেই, আয়োজন বিনা কারণে
হঠাৎ দেখায়, কৃষ্ণচূড়ায় শূন্য আমি
অন্ধঘরে

২২.০৩.২০২২
বোদা, পঞ্চগড়


একা

আকাশ দেখেছো?
তারায় ভরা, কানায় কানায় পূর্ণ আকাশ?
মিটি মিটি করে তাদের জ্বলে থাকা কথার ঝুড়ি?
দেখে কি তোমার মনে হয়েছে তারারাও খুনসুটি করে?

এবার চোখ মেলো,
তারাদের চোখে তাকাও,
নিজেকে তারাদের মাঝে মিলিয়ে আপন করে তোলো।
এগিয়ে যাও এক-পা, দু-পা করে।

তোমার প্রসারিত দৃষ্টি তারাদের বিচ্ছিন্ন করছে না?
না, বাস্তবে প্রতিজন মানুষ আমরা তারাদের মতোই বিচ্ছিন্ন।
বিচ্ছিন্ন এবং এতটাই একা যে, নিজেকে ছাড়া বাকী সকলেই আপন গোষ্ঠীতে ব্যস্ত দেখি।

তুমি দূর থেকে নিজে একা ভেবে যে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ো,
তার থেকে একশত যোজন একা আমি তারাদের মতো।
ঈশ্বরের মতো অক্লান্ত, তবু একা।
মৌলিকত্ব স্বকীয় নয়, একাকীত্ব লুকানোর ছল।

ভিষণ অবিশ্বাস নিয়ে তুমি একবার অনুভব করো,
আমি, তুমি সবসময় ❝একা❞


একা
১৬ মার্চ ২০২২
বোদা, পঞ্চগড়।


দ্বিতীয় হাশরের আগে

অনিচ্ছা নিয়েও ছাড়ছি তোমার শহর।
যতগুলো স্মৃতির জন্ম হবার সম্ভাবনা ছিল,
হয়তো তোমার ইচ্ছেতেই হালে বাতাস পেল না একটিও।
পাখিদের সাথে শেষ আলাপটা বাকি রেখেই ছেড়ে গেছে সন্ধ্যা
সেই সাথে ঢাকা পরেছে কাজলের রেশ তোমার চোখে।

পুরোনো গীর্জার ঘন্টার বিষাদ বাতাস ভাড়ি করার আগেই তুমি চাইলে উল্টো স্রোত,
দাড় বাইতে নিষেধ করলে ব্যর্থতার ভয়ে।
পিঁপড়েগুলো যখন অসময়ের বর্ষার সঞ্চারে মনোযোগী
তোমার মনোযোগ বিক্ষিপ্ত তখন দূরে সরে থাকার।

শেষ যুদ্ধের বাঁশি বাজাতে যে সৈনিক অনাগ্রহ নিয়ে জুতোর ফিতে বাঁধছিল,
তার হাতে আফিমের শিশি তুলে নেয়ার ছবি আঁকতে হচ্ছে আমার।
তোমার শহরের পুরোনো শ্যাওলাগুলো বুঝতে পারে
ভালোবাসার দিনগুলো আর সুর তোলে না সেতারে,
যখন খোয়ে যাওয়া রাস্তাটা বিলিন হবার আগে
আর একবার পথ দেখাবে বলে বুক বাড়িয়ে দেয়,
যখন অসমাপ্ত গল্পগুলো হাতড়ে চলে শেষ শব্দগুলো
তখন সৈনিকের আফিম শব্দ শোনার আগে তুমি ছিড়ে ফেলো শেষ ক্যানভাস।

আরো হাজার নিরব রাতে তোমার প্রতিক্ষা নিয়ে মেঘেরা ভির করবে আমার দরজায়,
ভিষণ অপমানে মুখ লুকানো আগে
আমি খুজতে থাকবো কাজল রেখা
আর নীলাভ টিপের পরিনতি।
শেষ না হওয়া গল্পটা মুনকার নাকেরের সাথে হিসেবে বসবে
যেন দ্বিতীয় হাশরের আগে আমি ফুরিয়ে যাই।

*******************
দ্বিতীয় হাশরের আগে
৮ এপ্রিল ২০২২
দিনাজপুর