Monday, December 30, 2024

ঈশ্বরের ঈর্ষায়

 


“তোমার হাতে অন্য কারো হাত দেখার পরে বুঝলাম,
খোদা কেন শির্ক পছন্দ করে না। “
গালিব বোধহয় ঠিকই বলেছিলেন!
আর সেজন্যই খোদা চান নি,
শেষদিন পর্যন্ত তোমার হাত আমার আঙুল ছুঁয়ে থাকুক।
ঈশ্বর জেনে ফেলেছিলেন,
আমার কাবায় শুধু তোমার নামেই সেজদা হয়।

মুনকার নাকেরের প্রশ্নের উত্তরে শুধু তোমার নাম ছাড়া
আর কোনো শব্দ আমার জানা নেই,
কেরামন কাতেবিনও ক্লান্ত তোমার নাম লিখতে লিখতে।
আমার পাপ-পূণ্য একমাত্র সমার্থক শব্দই যে তুমি।

তানসেনের ঝঙ্কারে গালিবের কবিতায়
তোমার নাম ভেসে ওঠা ছাড়া
দ্বিতীয় কোনো সুরের অস্তিত্ব আমার মাঝে নেই।

নেহাতই ঈশ্বরের ঈর্ষায়
নক্ষত্রগুলো আলোকবর্ষ দূরে অবস্থান করে…


Friday, September 20, 2024

মগজের গন্ধ


কি ভাবছেন?

ষড়যন্ত্র! 

ভিনদেশি? 

দেশি মদ?

শান্তি চুক্তি!

ক্ষমতা? 

নাকি নিপীড়নের ধারাবাহিকতা!


আপনি বলেছিলেন, নিরাপত্তা দেবো।

মাটিতে 

রক্তে

কাগজে?


তখনো অভাব প্রকট

ভাত

পানি

লবণ 

মগজ

অথবা চেতনায়! 


আমরা আসলে আপন হয়েছি কখনো?

লড়াইয়ে 

শিক্ষায়

সমতলে

পাহাড়ে?


আমার ইতিহাস লেখা হয় নি,

লেখা হয় নি চুক্তি বন্ধুত্বের। 

আমরা বারবার রক্তপাত করেছি,

ইতিহাস কালিতে লিখেছি,

ইতিহাস তার কাগজে চেয়েছিল রক্তাক্ত অক্ষর 

কিন্তু আমার মাত্র স্মৃতি দিয়েছি

ভঙ্গুর আর অস্থায়ী। 


আমরা চেয়েছি সুশাসন, 

আপনার ভেবে নিয়েছেন ক্ষমতা। 

আমাদের রক্তে সেচ দিয়েছেন সুবিধাবাদের খামারে,

অথচ নির্বোধের দলে আপনারাও ছিলেন। 


ফেলানী ঝুলবে,

তনুর নাম মুছে যাবে,

কল্পনা ফিরবে না,

আমাদের রক্তাক্ত ইতিহাসে 

ক্ষমতা শুধু নৈশভোজের আয়োজনে হাত পরিষ্কার করে। 


মগজের গন্ধ

২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রাজশাহী 

দ্য লাস্ট সাপার অথবা সাদা ভাতের মৃত্যু

থালা ভর্তি ধবধবে শিউলি ফুলের ভিতর

ক্ষুধার্ত আঙুল চালায় পাগল ছেলেটা।

আহ, মানুষগুলো কতো ভালো,

কেমন করে ক্ষুধাটা বুঝতে পেরেছিল।


নোনতা ডাল আর এলোপাথাড়ি সবজি মিশিয়ে 

পেটে চালান করতে শুরু করে উষ্কখুষ্ক চুলের ছেলেটা।

তোফাজ্জলের প্রাণে তখন ঢের শান্তি। 

পৃথিবীটা কত নিরাপদ, 

সাদা ভাত, নোনতা ডাল, ঠান্ডা পানি…


খাবার শেষ হবার সাথেই তোফাজ্জল তাকায়

দাঁড়িয়ে থাকা মুখগুলোর দিকে।

তোফাজ্জলের চোখে তখন পৃথিবীর ওজনে কৃতজ্ঞতা।

মানুষগুলো কতো ভালো,

ক্ষুধার্ত পেট, ঠান্ডা পানি, নোনতা ডাল, সাদা ভাত…


গালে হাত রেখে তোফাজ্জল বুঝতে পারলো,

কেউ একজন খুব জোড়ে থাপ্পড় বসিয়েছে।

নাহ, এটা তার মনের ভুল।

নোনতা স্বাদে মনে হলো নাক গড়ি ঠোটে রক্ত জমেছে,

হাত পা দুটো গামছায় বাধা,

শরীরের ওজন বাড়ছে তোফাজ্জলের।


ভাবতে ভাবতে ক্লান্ত  হয়ে তোফাজ্জল, 

মুহূর্তেই ঈশ্বর বোধ করি ভুল করে

পাহাড়ের ঠিকানায় পরিবর্তন করছেন।


মাটিতে পড়ে থাকা ছেলেটাকে একটু পানি খেতে দেয়

সাদা ভাত দেয়া ভালো মানুষগুলো

চোখ খোলে সে,

বিশ্বাস পায়, এতক্ষণে সে আবার নিরাপদ হয়।

কিন্তু পায়ের কাছে খুব গরম কিছু অনুভব করে।

তাকায়, নিজের চামড়া আর পশম পুড়তে দেখে,

পেটে কেউ লাথি মারলো,

নোনতা ডালের গন্ধ নাকে বুঝতে পারলো সে,

মেরুদণ্ড ভাঙার আওয়াজ অবিশ্বাসী কানে,

চোখ বন্ধ করে অসহ্য যন্ত্রণা আর ঘৃণায়।

তোফাজ্জল বুঝতে পারে, 

রাস্তার যে কুকুর তার গায়ে প্রস্রাব করেছিল

মূলত তার নিরাপত্তা সেই চামড়া পোড়া কুকুরটাই দিতে চেয়েছিল।


চরম ঘৃণায় চোখ খোলে না তোফাজ্জল, 

সে বুঝতে পারে কিছুক্ষণ পরে তার জন্য হাত বাড়িয়ে দাঁড়াবে যিশু 

শেষ বার খাবার খাওয়ার পর তার সাথেই প্রতারণা করা হয়েছিল।

তোফাজ্জল ভাবতে থাকে যিশুকে জিজ্ঞেস করবে,

সাদা ভাতে নোনতা ডাল আর মদে ভেজানো রুটির পার্থক্য কোথায়?


দ্য লাস্ট সাপার অথবা সাদা ভাতের মৃত্যু 

১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রাজশাহী

Saturday, August 3, 2024

শ্রম

…এবং তুমি বলো, যারা সৃষ্টি করতে জানে মাটি থেকে ফসল এবং প্রতিপালন করে জলাশয়ে মাছ ও খামারে আমিষ, তাদের ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে না। হে সুবিধাভোগীর দল, সাবধান হও। এতটা অকৃতজ্ঞ হইও না যে, যাদের শ্রমে-রক্তে পোষাক পরিধান করো এবং নিরাপদ যাত্রায় অট্টালিকায় বসবাস করো কিন্তু তাদের পাওনা আদায়ের সময় তোমাদের দুই ঠোঁট তাদের অবাধ্য হয়। নিশ্চয় তাদের সন্তানদের কান্নায় তোমাদের জীবন সহজ হয়।


আয়াত-১

আষাঢ় ২২, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
রাজশাহী

মাহমুদ ফাতুহ অথবা মোহেম্মেদ তামিমির জন্য কবিতা

মানুষ শব্দটা অদ্ভুত শক্তিশালী একটা শব্দ।
মানুষ শব্দে যতগুলো অর্থ আপনার মাথায় আসে
তাতে এটিকে একটি বাক্যও বলা যেত।

আপনি এবং আমি উভয়েই নিজেদের দাবি করছি মানুষ।
আমাদের বন্ধুরা মানুষ
আমাদের শত্রুরাও মানুষ
আমাদের মা বাবারা মানুষ
আমাদের সন্তানরাও মানুষ, তবে এটি প্রত্যাশা।

মজাটা কি জানেন?
ফিলিস্তিনে এই একটু আগে মিশাইলে যে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেলো,
সেও মানুষ ছিল।
তার মা বাবা বন্ধু সন্তান যারাই মরছে বা মরবার বাকি আছে!
সবাই মানুষ ছিল।

মাহমুদ ফেতুহ!
নাম শুনেছেন?
দুই মাস বয়সী মানব শিশু, ক্ষুধা নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে নিথর হয়ে মারা গেছে।
বাড়ির উঠোনে খেলতে খেলতে বুকে পাঁজরের বুলেটের নির্মমতায়
চার দিনের মরণপণ যুদ্ধ শেষে হেরে যায় মোহেম্মেদ তামিমি।
মরা সন্তানের লাশ খুঁজে পেতে শিশুদের হাতে নাম লিখে রাখছেন পিতারা।

কি নিদারুণ উৎসব আমাদের!
রঙিন পোশাক, উজ্জ্বল মুখমণ্ডল
মানুষ হওয়ার অহমিকায় পৃথিবীকে জানান দিতে ব্যস্ত আমরা।

মানবেতর পিতা বনাম মানুষ পিতা
মানবেতর সন্তান বনাম মানুষ সন্তান
মানবেতর বন্ধু বনাম মানুষ বন্ধু
মানবেতর বনাম মানুষের খেলায় উন্মাদ পৃথিবী
কিন্তু সত্যি মানুষ তো!

একবার বুকের উপর হাত রাখুন
আপনার উৎসবের দোহায়
একবার বুকের উপর হাত রাখুন
নিজের সন্তানের চোখে চোখ রাখুন
দাবি করুন আপনি মানুষ
অথচ আপনি প্রতিবাদ করেন নি মানুষ হত্যার
আপনি দাবি করুন আপনি মানুষ
অথচ আপনি প্রতিবাদ করেন নি সাম্রাজ্যবাদী তোষণের
আপনি দাবি করুন আপনি মানুষ
অথচ আপনি প্রতিবাদ করেননি নতজানু আপনার নীরবতার

বারুদে গোলাপ ফুটুক
বাগানে চাষ হোক প্রতিবাদের ঝংকার।
ধ্বংস স্তুপের বুক চিরে সবুজ ভালোবাসার জন্ম হোক
স্পর্ধার জন্ম হোক মানুষের বুকে


মাহমুদ ফাতুহ অথবা মোহেম্মেদ তামিমির জন্য কবিতা
১৪৩১, পহেলা বৈশাখ
বগুড়া

Saturday, July 27, 2024

যেমন ছিল-২

🔴কিছু দিন পর🔴

কমলা বাইজীর নতুন গানে মত্তো মহারাজা। আমোদের আসরে সব মহাজনেরা বেশ সুখেই সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত পার করছে। দেখা গেলো, আসরের কোনায় দাঁড়িয়ে রাজদূত মিটিমিটি তাকিয়ে আছে মহারাজের দিকে। কিছু বলবে সেই সাহসের জোগাড় আর হচ্ছে না। চোখ পড়লো মহারাজের, কাছে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন এই উৎসবে উদাস বদনের হেতু কি?

রাজদূত: মহারাজ, প্রধান সেনাপতি রাজকোষের যে চুরি করেছেন, এটা প্রজারা জেনে গেছে। সেনাপতিকে আপনি কিছু বলেননি জেনে এখন তারা জানতে চায়, চুরিতে আপনার ভাগ কতটা ছিল। এই নিয়ে রাজ্য জুড়ে শোরগোল চলে।

মহারাজ: শোন দূত, তোমাদের বলতে বলতে হাপিয়ে গেলাম। এই সন্ধ্যাকালে এমন আলাপ করবে না। সারাদিন এই মন্ত্রীদের খ্যাচড়খ্যাচড় শেষে সন্ধ্যাটা আমার ভালো কাটে, সেটাও তোমাদের সহ্য হয় না! তা আর কি বলে তারা বলে ফেলো, মধ্যরাতে আমার আবার কিছু বন্ধু রাজাদের সাথে দরবার আছে। তার আগে মেজাজ ঠিক করা চাই। আর সেনাপতির চুরির ভাগ আমি নিবো কেন, রাজকোষটাই তো আমার!

রাজদূত: মহারাজ, এই কথা বলেছিলো খাজাঞ্চি। এর পরে যে রামদলাই দিলও তাকে, তা চোখে দেখা যায় না। তারা এখন স্লগান দিচ্ছে, "জনগণের খাজনায়, ফূর্তী করে কোন রাজায়" ।

মহারাজ : (ক্রোধে পাগল হয়ে) তোদের সব কয়টাকে লাথি দিয়ে রাজ্য ছাড়া করা উচিত। আমারই রাজ্যে থেকে আমার নামে উলটাপালটা স্লোগান দেয় আর তোরা সব বসে থেকে মাথা নেড়ে চলে আসিস। কোন ফকিরগুলো স্লোগান দিচ্ছে তুলে নিয়ে গুম করে দে। আমার ভিন্ন রাজ্যের বন্ধুরা আসার আগেই আমি সবকিছু শান্ত দেখতে চাই।

মহারাজের ধমক আর গালিগালাজ কোন রকমে সহ্য করে সভা ত্যাগ করে রাজদূতসহ রাজার বিশেষ বাহিনী প্রধান। জনগণের ক্যাঁচক্যাচানি আবার মহলে গেলে মহারাজের চোখ রাঙ্গানি, যায় কই বাহিনী প্রধান! এবার সে সিদ্ধান্ত নিলো, যে করেই হোক না কেন, এমন চলতে দেয়া যাবে না। সুতরাং বিশেষ বাহিনীকে সে এবার নির্দেশ দেবে, "যে কটা মরে মরবে, যে কটা পঙ্গু হয় হবে, যত খুশি রক্তঝড়ার ঝরবে কিন্তু রাজমহলের আশেপাশে তো বটেই কোন বাজারে কিংবা রাজপথের আশেপাশে কোন প্রজাদের ভিড়তে দেয়া যাবে না। যেমন ভাবনা তার তেমন কাজ। মাত্র দেড় প্রহুরে সব স্লোগানের মুখ বন্ধ, এমনকি রাস্তার কুকুরগুলোও কুঁইকুঁই শব্দ করার সাহস পাচ্ছে না।
এদিকে রাজঝাড়ুদার সব পথে নেমে গেলো রাস্তা পরিষ্কার করতে। গলে যাওইয়া মাথার খুলি, ছিড়ে পরা কানের টুকরো, ভেঙে যাওইয়া হাতের কব্জি সাথে থিকথিকে রক্ত যেন দেখা না যায় তার ব্যবস্থা করতে। সন্ধ্যা নাগাদ রাজার বন্ধুরা সব আসছে বিশেষ বৈঠকে।

সব দেখে সীমান্তমন্ত্রী, দেশমন্ত্রী, সেনাপতি, বিশেষ বাহিনী প্রধানসহ রাজদূত আর চাটুকারের দল চললো রাজদরবারে। এমন দুর্দান্ত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে বিশ্বজনীন না করলে যে অপরাধ হবে তাদের, সেই সাথে একটা কুর্নিশে যতটা বকশিশ মেলে তা হাতছাড়া করা যাবে না...

রাজপ্রাসাদ তখন পুরো জ্বলজ্বল করছে রঙিন আলোয়, অতিথিদের আনাগোনা বাড়ছে, বাড়ছে আমোদ প্রমোদের জোগান। শুরু হবে বিশেষ বৈঠক বিদেশি রাজাদের সাথে…

চলবে…

পর্ব-২: ২৭.০৭.২০২৪, রাজশাহী

Thursday, July 25, 2024

অনিমেষের চিঠি-৬



শুভ জন্মদিন যিশু,

আজ তোমার জন্মদিন, প্রচণ্ড আশিস তোমার জন্য। আজন্ম ভক্তকুলের জন্য তোমার যে নিবেদন, তাতে আশিস যোগ ছাড়া আর কিছুই তোমার সমীপে দেয়ার ক্ষমতা কারো নেই মহামহিম।

ঈশ্বর পুত্র, জন্মদিনে তোমার জন্মভূমি কেমন আছে খোঁজ নিয়েছো? তোমার কত সন্তানের আজ রক্ত ঝরেছে তার খোঁজ কি নিয়েছো? জেরুজালেম আজ কার দখলে যাবে তার ফয়সালা কি তুমি করেছো ঈশ্বর পুত্র?

মরিয়ম তনয়,
হাজার পিতার বুক খালি করে ঈশ্বর পিতার সাথে বাস করছো তুমি, কেমন করে পারো তুমি! পিতার সাথে পাশা খেলায় ব্যস্ত তুমি জগৎ পুত্রের রক্ত গন্ধ কি পাও না যিশু?
গীর্জার গারদ দেয়া দরজায় কত মানুষ দাঁড়িয়ে, যে ছবিতে মাতা মরিয়ম তোমায় কমল হাসিতে জড়িয়ে আছে তার সামনে কত মানুষ গলায় রক্ত তুলে তোমায় ডাকছে, ক্রুশ বিদ্ধ তোমার সামনে তারা দাঁড়িয়ে ভারসা চাচ্ছে তুমি রক্ত যন্ত্রণা বুঝবে ভেবে। যিশু, তুমি কি তোমার পাথর মূর্তি রূপ ছেড়ে পারো না অসহায় মানুষদের সামনে দাঁড়িয়ে স্বর্গের সেই অমর বাণীগুলো শোনাতে। যা তুমি মহাত্মা পিটারকে শিখিয়েছিলে?

জগৎ মসিহ,
আর্তনাদ করতে করতে মানুষগুলো মনুষ্যত্ব নিলামে তুলছে, পেটের চামড়া ক্ষুধার তাড়নায় পুড়ে কয়লা হয়ে যাচ্ছে, শিশু আয়লানের মতো লাশ হয়ে ভাসতে থাকা ছবি দেখেও মানবতা এসি কামরায় আলোচনা চাচ্ছে। মরিয়ম পুত্র তবু তুমি কি পথ দেখাবে না!!!

ঈশ্বর পুত্র,
আজ তোমার জন্মদিনে হাজারো মানুষের হয়ে পিতার কাছে আর একবার চাও না স্বর্গরাজ্য, অন্তত শেষ বার চাও। শিশুদের কান্না আর রক্তের গন্ধে পৃথিবীর বাতাস বড্ড ভারি হয়ে আসছে, এখানে মানুষ বাস করতে পারে না। মায়ের কান্না ভরা পৃথিবীতে মানুষ বাস করতে পারে না। খালি কোলের পিতার আহাজারি নিয়ে পৃথিবী থাকতে পারে না ঈশ্বর পুত্র।
আর একবার স্বর্গরাজ্যের আশীর্বাদ ভিক্ষা চাও মরিয়ম তনয়, অন্তত শেষবার…

নিবেদনে,
মানুষ


(২৬ ডিসেম্বর ২০১৭, বগুড়া)


যেমন ছিল-১



❝আজি এই সন্ধ্যাবেলা
আমায় ডেকো না,
লোকে যদি দেখে তবে
বদনামে কূল ভাসাবে
চোখ আড়ালে ফিরে পাব না…❞

দরবারের মাঝে বসে সুরেল কণ্ঠে সবে গান ধরেছে কমলা বাই, ঠিক তখনই মূর্ছনার মাথায় মুগুর মেরে হন্তদন্ত হয়ে, একে তাকে ডিঙিয়ে ঢুকে পরলো সেনাপতি।

সেনাপতি: মহারাজ! মহারাজ! আর পারছি না, এবার আপনি কিছু করুন….

মদিরের নেশা ছুটে যাওয়ার চেয়ে এই মুহূর্তে মহারাজ ভূপেনন্দ্রনাথের কাছে বিরক্তিকর আর কিছুই নেই। নেশা কেটে গেলো, মূর্ছনা ভেঙে গেলো পারলে এবার মুণ্ডটা না আবার ভোগে যায়।

মহারাজ: ধ্যাত! (চরম বিরক্তি আর ক্ষোভ নিয়ে) এই হলোটা কি! তুমি কি আমাকে দু দণ্ড বাঁচতে দিবে না নাকি! তোমার জ্বালায় কি আমি রাজ্য ছাড়বো নাকি তোমাকে ছাড়া করবো সেই বিহিত এখনই বোধহয় করতে হবে। এই, এই সীমান্ত মন্ত্রী, এইটাকে এক্ষুনি নিয়ে যাও, এক্ষুনি…

সীমান্ত মন্ত্রী: (খানিকটা বিব্রত হয়ে) এক্ষুনি নিয়ে যাবো মহারাজ। তবে বলছিলাম, এইভাবে ঢুকে যখন পরেছে একবার শুনুন কি বলতে চায়।

মহারাজ : (মন্ত্রীর দিকে চোখ রাঙিয়ে) সবকটি হয়ে এক গোয়ালের, কে কার হয়ে সাফাই গাইবে তারজন্য মনে হয় কথা মুখে লেগে থাকে। তোমাকেও ওই জঙ্গল পার পাঠাতে হবে। এই খচ্চর, বলো, গাধার মতো লাফিয়ে আসলে কেন, বলো?

সেনাপতি: (কাঁচুমাচু করে) মহারাজ, আপনি গতকাল সভায় সব প্রজাদের মূর্খ বলেছিলেন। সেকথা তারা জানার পর মিছিল করে জানতে চায় আমাদের মহারাজ কতটা শিক্ষিত। পিটিয়েও কাউকে সরানো যাচ্ছে না।

মহারাজ: (তাচ্ছিল্যের সাথে) তোমাদের নিয়ে পারি না আমি, এই সামান্য বিষয়ে এতটা অস্থির হলে চলবে! এই শিক্ষামন্ত্রী, তুমি কালই এক জনসভার আয়োজন করবে, সেখান থেকে আধুনিক শিক্ষার রূপকার হিসেবে আমাকে বিশেষ সম্মাননা দেবে আর খাদ্যমন্ত্রী, তুমি আজ রাতের মধ্যে বাজারে খাদ্য সংকটের নামে সব কিছুর দাম বাড়িয়ে দিবে। বাজারের চিন্তায় মূর্খদের আর কিছু মনে থাকবে না, সাথে সম্মাননা অর্জন ভেবে আমার যোগ্যতা নিয়ে কেউ কথা বলবে না।

মহারাজের আদেশে শিক্ষা আর খাদ্যমন্ত্রী কাজে নেমে গেলো এবং যা হওয়ার তাই হলো, দুটো পয়সার জন্য মানুষ এত ব্যস্ত হয়ে পরলো যে কোন কিছুই মনে পরে না কারো।

চলবে…

(পর্ব-১: ২৫.০৭.২০২৪, রাজশাহী)

Thursday, July 18, 2024

লোকালয়ের গল্প

লোকালয়ের গল্প (ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত) 
 

লোকালয়ের সবচেয়ে জমজমাট অবস্থানে রাজ ঘোষক ঢেঁড়া পেটাতে পেটাতে সৈন্য পাহারায় আগমন করছেন। বাধান বুড়ো বটগাছের তলায় দাঁড়িয়ে ...

ঘোষক : শোনো, শোনো, শোনো। মহারাজের নিকট সূর্যদেবের দূত জানিয়ে গেছে "আগামীকাল হতে, সূর্যদেব এক প্রহর পরে আসিবেন এবং এক প্রহর আগে প্রস্থান করিবেন।" যার কারণে দিনের আলো এখন থেকে কম পাওয়া যাবে। যার যা কাজ তা এই সময়ের মধ্যেই শেষ করতে হবে। এ নিয়ে মহারাজের কাছে কোন আপত্তি করা যাবে না।

ঘোষক আর পাইক পেয়াদাদের প্রস্থানের পরে নাগরিকরা নিজেদের মধ্যে কপালে ভাঁজ তুলে চিন্তিত ভঙ্গিতে আলাপ শুরু করলো।
নাগরিক ১ঃ এটা কেমন হলো! দুই প্রহর আলো না থাকলে কাজ-কম্মের কি গতি হবে। আমার  
                           গরুগুলোকে মাঠে নিয়ে যাবো কখন আর আনবো কখন!
নাগরিক ২ঃ আরে দাদা, তুমি আছো গরু নিয়ে! সূর্যদেব যে দুই প্রহর আসবেন না, এর কারণ কি 
                           হতে পারে সেটা আগে বের করা দরকার। বলি হঠাৎ এই ক্ষোভের কারণ কি?
❊❊নাগরিক ৩ঃ কারণ আর কি হবে! দেখ, কেউ নিন্দা করেছে সূর্যদেবের নামে আর অমনি নারদমুনি 
                            টুক করে কথা লাগিয়ে বসে আছে।
নাগরিক ৪ঃ আরে ভাই, দেবতার নামে নিন্দা! এও আবার হয় নাকি! 
❊❊নাগরিক ৩ঃ কেন হবে না! মহাদেবের নামে কত কথা, গাঁজা খায়, ছাই ভস্ম মাখে, শ্মশানের                                     মরাগুলো তার পেটে ঢোকার কথাও তো কম শুনি নি। ব্রহ্মও তো শুনি খুব রসিক আছে।
                         আর ইন্দ্র দেবের রাজ সভার কথা... না থাক! তা এই ত্রিদেবের নামে যদি এত কথা থাকে
                         তো সূর্যদেবের চুটকি ছড়াতে কতক্ষণ।
নাগরিক ২ঃ তাই বলে কে না কে কি বলেছে আর সবার উপর এমন চড়াও হয়ে দাঁড়াতে হবে!
❊❊নাগরিক ১ঃ আমার মনে হয় অন্য কিছু। এই ধরো, আমরা যে মাসোহারা দেই, মানে ওই পূজা 
                            আর্চায় যা করি আরকি। তাতে তিনি তুষ্ট নন মনে হচ্ছে।
নাগরিক ৫ঃ না ভাই, সে তুমি বলতে পারো না। ওই সক্কালে ঘুম থেকে উঠে সূর্য প্রণাম না করে 
                            আমরা কেউ ঘর ছাড়ি না। আবার সপ্তাহের শুরু, মাসের শেষ, ফসলের প্রথম মুষ্টি সব 
                           কিন্তু এ রাজ্য সূর্যদের স্মরণে আর বাৎসরিক নামাবলি আয়োজনের কথা বলার কি 
                            আছে, সে তো সাত রাজ্যের কান ফাটিয়েয়ে করা হয়।
❊❊নাগরিক ৪ঃ  সবই তো বুঝলাম। কিন্তু দিনের আলো না পেলে আমাদের মাঠের ফসল, গোয়ালের 
                        গরু, উঠানে গবাদি বা আমাদেরই কি হবে। বেশি অন্ধকারে পিলে চমকানো রোগ হয়, 
                        ঘরবাড়ি স্যাঁতস্যাঁতে থাকলে হাঁপানি, জামাকাপড় না শুঁকলে চুলকুনি, অতিরিক্ত আলোর 
                        জন্য জ্বালানি, না ভাবতে পারছি না!!!

হঠাৎ আড্ডায় আগমন আরেক নাগরিকের। সে আবার দীর্ঘ সাধনায় ভগবানের আশীর্বাদে অজ্ঞাত জ্ঞানের মালিক। লোকে তাকে ধরলো সূর্যদেবের এহেন সিদ্ধান্তের কারণ কি? লোকেদের কপালের ভাঁজ দেখে সে পরদিন জানাবে বলে চলে গেল। লোকেরাও মাথা নাড়তে নাড়তে চলে গেল কোন কিনারা না করতে পেরে।

🌞
পরদিন সূর্য উঠল কথা মত এক প্রহর পরে। লোকেরা ছুটলো সেই অজ্ঞাত জ্ঞানের মালিকের কাছে। জানতে হবে, কারণ কি আর প্রতিকারই বা কি?

নাগরিক ৬ঃ (খানিক থমথমে গলায়) সূর্য দেবের তেজ খানিক কমে গেছে। যার কারণে বেশিক্ষণ                                 তোমাদের  দেখভাল তিনি আর করতে পারছেন না।
❁❁সমবেত নাগরিক : কিন্তু এ কি করে সম্ভব! দেবতার তেজ কমে কি করে?
নাগরিক ৬ঃ কমে কমে। তোমাদের পুজোর তুষ্টিতে তিনি এমন ঘুমিয়েছেন প্রতিদিন যে তার
                               শরীরে মেদ বাড়ায় নড়াচড়া কমে গেছে। নড়া চড়া কমে যাওয়ায় শরীরে বাসা 
                              বেধেছে নানান রোগ। আবার তোমাদের ভোগে কেউ এত তেল, এত ঘি, এত মাখন 
                              দিয়েছো যে তাতে তার শরীরের ধমনিগুলো বন্ধ হয়ে প্রায় মরবার উপক্রম। এ  
                              অবস্থায় তার এই সামান্য নড়াচড়াও বিস্ময় ছাড়া কিছু না।  
❁❁সমবেত নাগরিক : তাহলে এখন করণীয়?
নাগরিক ৬ঃ সকলে যজ্ঞ শুরু কর, নতুন কেউ সূর্য দেবের দায়িত্ব না নিলে এর প্রতিকার নেই
                             (খানিক থেমে, চিন্তার সীমা চরমে তুলে, আরো গম্ভীরর ভাবে) আবার শুনছি,
                             পবন দেবের শরীরও ভালো যাচ্ছে না। কবে না আবার বাতাস বন্ধ করে বসেন, তাতে 
                            তো প্রাণ সংহার নিশ্চিত।
নাগরিক ৪ঃ... কিরে, রাজ ঢেড়ার আওয়াজ শোনা যায় মনে হচ্ছে...

(দূর থেকে ঘোষকের ক্লান্ত গলা শোনা যাচ্ছে)
শোন, শোন, শোন। গত রাতে পবন দেবের দূত মহারাজের.................. 



 ঢাকা, ২১.০৭.২০২২