Sunday, December 26, 2021

পুরুষতান্ত্রিক কবিতা

 

.........

মাকে নিয়ে আমাদের কথা কবিতার কোন শেষ নেই।
কেনই বা শেষ হবে!
পুরুষতান্ত্রিক এই সমাজে হাজার বঞ্চনা চেপে
স্বপ্নের কবর মাড়িয়ে যে ঈশ্বর আমাদের মানুষ অবয়ব দেয়
তাকে নিয়ে কেন একসাগর কালিতে লেখা হবে না মহাকাব্য!

তা বলে বাবাদের নিয়ে একটা রচনা সমগ্র হবে না?
হ্যাঁ, নাড়ি ছিড়ে পৃথিবীর আলো তিনি দেখান নি
কিন্তু ঈশ্বর যখন কাদা মাটিতে আমার অবয়ব দিচ্ছিলেন,
তখন নরম মাটি শক্ত শিলায় পরিণত হবার হাত থেকে বাঁচাত তার চেষ্টা?
তার জন্য তো একটা নিদান কাব্য গ্রন্থ হতে পারে না?

বাবাদের কি স্বপ্নের বিসর্জন নেই?
পুরুষতান্ত্রিকতার আগুনে তার মগজ গলে শহরে অলিতে গলিতে পরে থাকত।
এখন শুকিয়ে হালকা দাগের মতো দেখায়।
প্রতিদিন সেই মগজে পা রেখেই তো নিজের স্বপ্ন রঙিন হয়।

পিতৃত্বের মুখোশ তাদের ভেজা চোখ দেখা যায় বলে কি
তাদের কান্না আসে না?
কাল পিচে ফেটে যাওয়া পায়ের গোড়ালিতে নিজের ছায়া পিষে ফেলে
এগিয়ে যাওয়া মানুষটার জন্য অন্তত একটা পঙতি রচনা হতে পারে না?

(অপ্রয়োজনীয় লাইন: বাবাদের জন্য যখন অভিধানের কালো অক্ষর হারিয়ে যায়, মাতৃভাষার গর্ব তখন ক্ষুন্ন হয়।)

২৩/১২/২০২১
বোদা, পঞ্চগড়

Sunday, October 17, 2021

বিপরীত সময়

 যে শহর একসময় মিছিল-শ্লোগানে ফেটে পরতো

সেই শহরে কাকেদের কর্কশ ধ্বনি ছাড়া কিছু কানে পরে না।
প্রতিবাদ ভুলে আজকাল লোকেরা প্রয়োজন তালিকা নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।
ফুটপাতে পরে থাকা গোলাপ মাড়িয়ে গেলেও,
বিকেলের ক্লান্ত রোদ দেখার সময় মেলে না।

মানবিক মানুষগুলোকে বড্ড বেশি অভিনেতা মনে হয়।
যান্ত্রিক চোখে সজ্জা ছাড়া, মানবিকতার গল্প দাঁতে কাটে না।
পাখিদের গল্প লেখার সময় হয় না কবিদের,
কবিতার অক্ষরগুলো সাদা কাগজের কারাগারে,
আর ভাষাগুলোর গোরস্থান ছাড়া দেখা মেলে না।

অথচ, এই শহরে প্রতিদিন লেখা হতো কাঠগোলাপের ছন্দ।
ভোরের নিভু নিভু তারাদের উপাখ্যান হেটে বেড়াতো সন্ধ্যা অবধি,
বুকপকেটে ছুটে যেতো ছাপাখানায়।
বুড়ো বটগাছের ছায়ায় ঝাকড়া চুলের দল সিগারেট উড়িয়ে,
কতো কতো নকশা উড়িয়ে ছিল, এই শহরে।

❝না❞ শব্দের আলিঙ্গনে এক একটা সুখপাখি বনবাসে ফোরাতের বিভীষিকায়।
নিষিদ্ধ হতে হতে, কাগজের কারাগারে গারদ সংখ্যা বাড়ে।
তবু, গোরস্তানে ভাষাগুলোর কান্না প্রয়োজনের চিৎকারে কানে পরে না।


বিপরীত সময়
শেখ মাসুকুর রহমান শিহাব
৯ অক্টোবর ২০২১
বোদা, পঞ্চগড়।

Thursday, June 3, 2021

নিরস মৃত্যু

মৃতদেহের সামনে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দেয়াটা খুব সহজ।
আত্মহত্যার দায়ে তাকে ভৎসনা করে 
জাগতিক তত্ব কপচিয়ে 
চুলে পাক ধরানো সারা জীবনের জ্ঞান উগরিয়ে 
মৃতের পরিবারকে প্রবচন দেয়াটা আরো বেশি সহজ।

আত্মহত্যা সমাধান না!
সংগ্রাম চালিয়ে নিতে হতো শোসকের বিরুদ্ধে! 
অল্পমূল্যে শ্রম বিক্রি করে হলেও টিকে থাকতে হবে নিষ্ঠুর পৃথিবীতে! 
সমাজ যে জীবন গড়ে দিয়েছে তা হরণ করার এখতিয়ার তোমার নেই!
একবার সিলিংয়ে ঝুলানো ফাঁসে গলাটা বাড়িয়ে দেখুন।
জীবন সংগ্রামের কোন স্তরে পৌছালে আত্মহনন সম্ভব হয়।

মধ্যবিত্ত পিতাকে জিজ্ঞেস করুন,
সন্তানের প্রত্যাশিত চোখ যখন হতাশায় হাহাকার করে ওঠে 
তখন বুকের জমিনে কোন দামামা বাজে?
অভুক্ত ক্লান্ত মাকে একবার জিজ্ঞেস করুন,
শূন্য স্তনে হাতড়ে বেড়ানো শিশুর অস্থিরতা 
মাকে কোন সংগ্রামে ছুঁড়ে ফেলে?

জড় পদার্থের মতো আপনাদের শীর্ণ কণ্ঠের প্রতিবাদে
আজো ভাত জোটেনি কোন পথশিশুর। 
নির্জীব আপনাদের বাক্য বাণে একবারের জন্যও 
চকিত হয়নি অপদার্থ রাষ্ট্রযন্ত্র।

তবু লাশের পাশে দাঁড়িয়ে
আপনাদের সংগ্রামের বাণীতে থাকবে না কোন আহাজারি। 
তবু আপনারাই আরো হাজার বছর বিপ্লবের স্বপ্ন দেখাবেন 
আর একে একে মরতে দেবেন কৃষক-শ্রমিক-মধ্যবিত্ত।
তবু আপনারাই আত্মহত্যা নিয়ে প্রবচন শোনাবেন,
আর ক্ষীণ কণ্ঠে অশ্রুত ভঙ্গিতে নগর প্রদক্ষিণে শোনাবেন “লাল সালাম”।

(২ জুন ২০২১, সাতমাথা/বগুড়া) 

Thursday, May 13, 2021

মানুষ হত্যার জবাব চাই


❝আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ
আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, ওয়া লিল্লাহিল হা'মদ।❞

মহান রবের এমন প্রসংশা ধ্বনিতে 
সমবেত উদযাপনে যুক্ত হবেন কিছুক্ষণ পর,
সৌম্য-শুভ্র পোষাকে জায়নামাজ হাতে 
আপনার শরীরে মিষ্টি আতরের সুগন্ধ।
ফিরে এসে সপরিবারে পাতে পাতে মিষ্টান্ন। 
মহান রবের আরাধনায় আপনাদের অর্ধাহারের আপাতত সমাপ্তি। 
উদযাপনের কি নিদারুণ ব্যস্ততা আপনাদের!

অন্যদিকে দেখুন, বালুময় আফগানী কন্যার রক্তাক্ত স্কুলের পোশাক নিয়ে আমি জায়নামাজে।
আমাদের পিতারা ফিতর উদযাপন করছে সন্তানের কবরগাহে
সারিবদ্ধ দাঁড়িয়ে।
আপনাদের ফিতরে ঈদ থাকলেও 
ভাঙা স্তুপের নিচে দাঁড়িয়ে আমরা চিৎকার করে বলছি- 
“....ওয়া লিল্লাহিল হা'মদ”।

শাওয়ালের চাঁদ আমি রক্তাক্ত ফিলিস্তিন থেকেই দেখেছি,
যে চাঁদে তাকবির উচ্চারণ করে 
আপনি ছুটে গেছেন কোলাকুলি করতে,
একই চাঁদে প্রায় ছিবড়ে যাওয়া শিশুটি হাতড়ে ফিরছে
একটু আগে বোমায় শতচ্ছিন্ন তার পিতার শরীর। 
আপনার শুভ্র বাতাস আমার সীমান্তে বারুদ হয়ে বুক ভারি করে তোলে।
সন্তানের সাথে পোলাও কোরমায় আপনি যখন মগ্ন,
তখন হুইল চেয়ার থেকে আমি ঘৃণা ছুঁড়ছি ইজরায়েলে।
যুদ্ধ বিমান সম আমার ঘৃণা আকাশ কাঁপিয়ে তাকবির তোলে 
...ওয়া লিল্লাহিল হা'মদ”

আমার ছেলের কপাল থেকে রক্ত ঝরার দৃশ্যটা 
আপনি খুব দেখেছেন, আর বলেছেন “ইস্”, 
কিন্তু আপনি তার রক্ত স্পর্শ করেন নি।
ঈদগাহে যাবার পথে আপনার স্মরণ হয় নি 
পৃথিবীতে রক্ত ঝরছে, গোরখোদকেরা ক্লান্ত।
ধুলো মাখা ক্রন্দনরত রক্তাক্ত শিশুর কথা আপনার স্মরণ হয় নি।
মানুষের মৃত্যুর মিছিলে কেবল আপনার তাকবির উড়ছিল 

❝আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ
আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, ওয়া লিল্লাহিল হা'মদ।❞

আপনার সেই "ইস", মূহুর্তের আফসোস 
আমার সন্তানের মগজ ছিটকে পরা থামায় না,
আপনার সুগন্ধি আর জায়নামাজেও
মহান রব পুলকিত হতে পারেন না।
আফগান-ফিলিস্তিনে মানুষের হিসেব না করেও
আপনার শাওয়ালের ঈদ হয়।

কিন্তু  শতচ্ছিন্ন কাপড়, রক্তের গন্ধ 
আর ধুলোর সুরমায় আমার আকাশে 
ফিতরের তাকবির শোনায়- 

❝ইনসানু হুম আকবার, ইনসানু হুম আকবার,  লা তুজাদু হা'কিকা বিদুনিন নাস

ইনসানু হুম ইফদাল, ইনসানু হুম ইফদাল, উরিদাল ইজাবাত আ'লা কুল্লি কা'তরাতিত দাম❞

*****************

মানুষ হত্যার জবাব চাই 
১৩ মে ২০২১, বগুড়া

মিথ্যেবাদী তুমি


কি চমৎকার করে তুমি মিথ্যে বলতে পারো!
আমি অবাক হয়ে যাই।
অবাক হয়ে আমি তখন তোমার চোখে তাকাই,
তখন তোমার চোখে কোন কাঁপুনি থাকে না,
কান গুলো একটুও লাল হয়ে যায় না মিথ্যা বলার চরমতম দুঃসাহসে।

সত্যি, কি চমৎকার করেই না তুমি মিথ্যে বলতে পারো!
প্রচন্ড আক্ষেপে সারাটা দিন ধরে কান্নাকাটির পর
লাল হয়ে থাকা চোখ দুটো দেখে যখন কারণ জিজ্ঞেস করি,
নাকি স্বরে “ও কিছু না” বলে চোখ লুকাও।
তখন আমি শুধু আশ্চর্য হই।

কতোগুলো উৎসব জুড়ে সেই পুরনো ভাজ করা শাড়ি গুলো দেখিয়ে যখন বলো,
এ হলেই আমার চলে যাবে আরো কটা উৎসব।
অথচ তোমার তা প্রয়োজন ছিল বটেই,
তখন আমি অনেকটা ক্ষ্যাপাটে ভাবেই ভাবি 
অদ্ভুত, কি করে তুমি মিথ্যে বলতে পারো!

প্রতি রাতে হাজার প্রতিশ্রুতি আমার,
তার সুর ধরে তোমার স্বপ্নের জাল বোনা।
অথচ তুমি খুব করে জানো প্রতিশ্রুতি গুলোর সিংহভাগ হয়তো কখনোই আসবে না।
তবুও বার বার তুমি চাও আমার ভঙ্গুর প্রতিশ্রুতি শুনতে। 
ওতেই তোমার সুখ খুঁজে পাওয়া দেখেও আমি খুব খুব এবং খুব করে আশ্চর্য হই।

সেই কবে কথা দিয়েছিলাম,
ঝুম বৃষ্টিতে আবার কাক ভেজা হয়ে নির্জন বসবাসের। 
আমি জানি প্রতি বরষণে জানলায় দাঁড়িয়ে তার প্রতিক্ষায়
আর অগোছালো জীবনটাকে টেনে টেনে তোলো।

ফের কখনো প্রয়োজন জানতে চাইলে
“ঢের আছি” বলে ঠোঁট চাপো।
সত্যি আমি অবাক হই,
কি চমৎকার করেই না তুমি মিথ্যে বলতে পারো!


(১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, বগুড়া)

Friday, April 23, 2021

হত্যার অবসান

শেখ মাসুকুর রহমান শিহাব 
সম্ভবত ঘুমন্ত মানুষের কোন পাপ থাকে না।
হত্যার তীব্র ইচ্ছা নিয়ে যখন ব্যক্তির মাথার পেছনে আমি
তখন তার নিথর ঠোঁট আমাকে নিয়ে কোন অযাচিত বাক্য ব্যবহার করছে না,
আমি আশ্চর্য হয়ে দেখছি তার চোখ
সেখান থেকে আমার দিকে বিষাক্ত তীর ছুটছে না।

সত্যি কি ঘুমন্ত মানুষের পাপ থাকে না!
আমি হত্যার আরো তীব্র ইচ্ছা নিয়ে লক্ষ্য করলাম
তার যে হাতের ইশারায় মিথ্যা অপবাদগুলো প্রায় সত্য হয়ে ওঠে
তা নিথর হয়ে পরে আছে,
সক্রিয় চক্রান্ত গুলো স্থবির হয়ে আছে তার ঘুমের চাদরে। 
যে পা একটু একটু করে পাপ বয়ে বেড়ায়
তাও অক্ষম ঘুমন্ত মানুষের কারণে। 

আচ্ছা, ঘুমন্ত মানুষের কি সত্যি পাপ থাকে না?
তবে পৃথিবীর সব মানুষ ঘুমিয়ে পড়ুক, 
চির নিদ্রায় চলে যাক সব অমঙ্গলের দল।
আমাদের হত্যা বাসনার অবসান ঘটুক।
কোলাহল মুক্ত পৃথিবী গেয়ে উঠুক সাম্যবাদী গান।

(২২ জুন ২০২০,বগুড়া)

আসুন, প্রশ্ন করি

শেখ মাসুকুর রহমান শিহাব
আমি যদি অসময়ে মারা যাই অথবা আত্মহত্যা করি 
তবে হে চিন্তাশীল মানুষগণ, কাকে দায় দেবেন?
কাকে জিজ্ঞেস করবেন আমার মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে?
কাকে প্রশ্ন করবেন, আপাত বোকা এই ছেলেটা কেন আত্মহত্যা করলো?

আপনারা কি আমার পরিবারকে দায় দেবেন?
যাদের সাথে আমার অবসর বা রাত যাপিত হয়েছে,
শুধু মাত্র দু'বেলা খাবার একসাথে খাই বলেই কি,
তারা আমার মৃত্যুর কারণ জানতে পারবে!
অথচ তারা চূড়ান্ত ভাবে অক্ষম আমার মস্তিষ্কের আলোড়ন জানতে,
সংসারের ঘানি টানতে গিয়ে মধ্যবিত্ত বা তার নিচের মানুষগুলো 
মানুষ থেকে কবেই ভারবাহী প্রাণীতে রুপান্তর হয়েছে তা তারা নিজেরাই জানে না।
তবে নিশ্চয়ই আমার পরিবার এটা জানে না,
কেন আমি মারা যাচ্ছি...


আপনারা কি আমার নিকটাত্মীয় বা বন্ধুদের জিজ্ঞেস করবেন? 
অথচ প্রচণ্ড ক্ষুধার সময় তারা কেউ জানতই না আমার অক্ষমতা। 
শেষ সন্ধ্যেবেলা আধখাওয়া সিগারেট টানতে গিয়ে পেটে যে প্রচণ্ড মোচড় উঠেছিল,
তা কোন বিলাশী খাবারের অম্বল নয় বরং ক্ষুধা।
সেই বন্ধুদের জিজ্ঞাসা করা কতটা ফলপ্রসূ হবে
যারা এটা জানে না যে, শীতে আমি কতমাত্রায় কম্পন অনুভব করবো।
তাহলে তারাও কি আমার মৃত্যুর দায় মুক্ত নয়...?

আপনারা কি অথর্ব ও আত্মবিস্মৃত রাষ্ট্রযন্ত্র এবং তার পরিচালকদের প্রশ্ন করবে?
সংবিধান অনুযায়ী যাদের দায়িত্ব ছিল আমার প্রতি,
আমার ক্ষুধা পেটে মোচড় কাটার আগে বা
শীতের কম্পন আমি মাপতে যাবার আগে এর ব্যবস্থা করা।
বিনা চিকিৎসায় মরবার আগে
শিক্ষা ব্যায় বহন করতে না পেরে ফাঁস নেবার আগে
বেকার হয়ে হতাশায় ডুবে মরবার আগে
সংবিধান (যা কিনা জীবনের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত), হ্যাঁ সংবিধান এই পরিচালকদের দেখ ভাল করার দায়িত্ব দিয়েছিল, তাদের প্রশ্ন করবেন?

আসুন না,
প্রায় মরে যাওয়া এই নির্বোধটার মৃত্যু নিয়ে
আপনাকে জিজ্ঞাসা করি।
নাগরিক হিসেবে অন্য নাগরিকের মৃত্যু দায় নিয়ে আপনাকেই না হয় প্রথম প্রশ্ন করি...



(২৭ জুন ২০২০, বগুড়া)

আবলতাবল দিন

শেখ মাসুকুর রহমান শিহাব

বিকৃতি আজ পরিবর্তন 
প্রপাগাণ্ডাও আন্দোলন, 
খনন মাঝে উন্নয়ন 
হাওয়ার কলে আটকে মন।

বিষ যেখানে হয় মধু
চলন বলন সব সাধু,
আটকে যায়রে রেল চাকা
চেয়ার পাল্টে লাউ কদু।

পাবলিসিটিই মুল কথা
চুল কপাল সব লোক দেখা,
খড়ের গাদায় সুই খোজা 
হাত তালিতে সাবাস দাদা।

বলি চায়ের কাপে উঠলো ঝড়
শহর জুড়ে এক আলাপ,
দাদারা সব হিরো হলেন 
শুনি খবর দিচ্ছে লাফ।

এঘর ওঘর করে পরছে রোল
দোকান টঙে গণ্ডগোল, 
দাদারা সব গঙ্গা পাড়ে
ধরবো বোয়াল উঠলো শোল।

কান্নাকাটি, 
না শুনলে আজ চিমটি কাটি,
গাল পুরে দে পানশুপোরী,
বলছি যে এক গল্প ভাড়ি।

মঞ্চ করে উঠলো ডেকে
দাদা ছাড়েন হুঙ্কার,
বিকৃতসব গপ্পোগুলো
গড়ছে দারুণ বাঙ্কার। 

এধার ওধার সবধারেতে 
গুছিয়ে বেশ পরিপাটি,
রশময়ের গপ্পো সাজাই
নাম যদিও নয় চটি।

আসল খবর দিলেই তো ভাই
মুখ বাঁকিয়ে পথ ধরো,
হুজুগ শুনে কান না খুঁজে 
আন্দোলনের পথ খোঁজ।

দেশ এভাবে চলছে বটে 
চলবে আরো বেশ কদিন,
হাওয়ার গাড়ি উড়ছে ভাড়ি
দম ফুরালেই শুধবে ঋণ।


(৩০ আগস্ট ২০২০, বগুড়া) 

Wednesday, April 21, 2021

ক্ষুধার্ত সংলাপ

(শেখ মাসুকুর রহমান শিহাব)

বড় রাস্তার মোড়ে উদ্ভ্রান্ত এক যুবক আচমকা আমায় প্রশ্ন করলো,

“বলতে পারেন সবচেয়ে বড় ঈশ্বর কে?”
আমি হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে আমতাআমতা করে বললাম,
“এই ধরুন ইসলাম ধর্ম বলে আল্লাহ,
ঈশায়ীরা আল্লাহকে মানলেও সাথে যীশু,
হিন্দুর বলেন মহেশ্বর.... ”
আমাকে থামিয়ে দিয়ে যুবক বললো
“আপনার কাছে সবচেয়ে বড় ঈশ্বরের নাম জানতে চেয়েছি”।

এরপর অনেকগুলো রাত আরাধনা করেছি,
একেরপর এক ধর্মগ্রন্থগুলোর পৃষ্ঠা শেষ করেছি,
সেজদা থেকে শুরু করে চার্চের মোমবাতি ঝড়িয়ে চলেছি
তবু বড় ঈশ্বরের নাম জানা হলো না।

উদ্ভ্রান্ত যুবকের এমন আজগুবি প্রশ্ন ভুলতে বসেছিলাম দিনকতক পরে।
পেছন থেকে অট্টহাসির মতো আওয়াজে কে যেন প্রশ্ন করলো,
“কি, খোঁজ পেলেন বড়ঈশ্বরের?”।
হকচকিয়ে দেখি যুবকটি একগাল হেসে তাকিয়ে আছে।
উচ্চস্বরে সে বললো, জানি পারবেন না
অথচ রোজ আরাধনা করেন সেই ঈশ্বরের,
তার খোঁজে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ নাকাল হয়ে যায়,
প্রতি রাতে তার নামের প্রার্থনা কুড়েঘর থেকে অট্টালিকা পর্যন্ত।
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ঈশ্বরের নাম ভাত....


শেখ মাসুকুর রহমান শিহাব,

সাতমাথা/বগুড়া

১৮/১১/২০২০

Saturday, April 17, 2021

অনিমেষের চিঠি-৩

(শেখ মাসুকুর রহমান শিহাব)


কন্যা, 

আজ তোমায় অসাধারণ দেখাচ্ছিল। বহু বছর পরে দেখছি বলে মনে হচ্ছিলো। তোমার কথা বলার ধরন বুঝতে দিচ্ছিলো না, আসলে কি চাও তুমি। সবতো শেষ করেছি, আর কি দেই। সবতো শেষই করলে। আকাশে মেঘ দেখে তোমার মনে পরলো একছড়া কদম ফুলের কথা, শেষ বর্ষায় তোমায় দিয়েছিলাম। আমিতো ভুলতেই বসে ছিলাম, তুমি আবার কেন জ্বালাচ্ছো!

কন্যা, আজ তুমি কদম খুজছো সৌখিনতায়। কিন্তু তুমি হয়তো ভুলে গেছো এই অলস সময়ের জন্যই পথ দুটো হয়ে গেছে।
নীল জিন্স আর টি শার্ট পরে কাক ভেজা মূহুর্ত আমিও ভুলিনি। কিন্তু কদম ছিঁড়তে ও পথে আমি আর পা বাড়াতে চাইনা। আজ যখন তুমি কদম ছিঁড়তে চাচ্ছো তখন কতো কমল পাপড়ি পায়ে পিষে যাচ্ছে তাকি তোমার খেয়ালে আছে! পথের পাশে গাছতলায় তোমার-আমার পায়ে পিষে যাচ্ছে কতো?
গতসন্ধ্যার বৃষ্টিতে বেরিয়েছিলাম, একগাছা কদম হাতে নিতে খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো। তোমায় ভাবছিলাম কিছুক্ষণের জন্য। হাতে বকুলের চুড়ি, বেলীর দুল, মাধবীলতার খোঁপা, সবুজ ঘাসের পায়েল আর করবী ঝুলানো নীলকাঞ্চনের মালা। পরনে ছিল সাদা শাড়ি, বর্ষা আরেক ফুল যেন হয়ে উঠছিলে। আমি কি তোমার চিন্তায় ডুবে যাচ্ছি! না বরং আসল কথাই বলি।
কন্যা, পাহাড়ের মাথায় মেঘে ধোয়া কদম দেখেছো! তোমার কল্পনার চেয়ে সুন্দর। পাহাড়ে ক্যান্টনমেন্ট দেখেছো? কদম গুলো চাপা পরছে ওর শক্ত বুট জুতার নিচে। আমার ভালোবাসার পাপড়ি যে ভাবে তুমি মুচড়েছো, ওরা সেভাবে পাহাড় মোচড়ায়, পাহাড়ের শান্তি মোচড়ায়, নীলকাঞ্চন মোচড়ায়, মেয়ে মোচড়ায় আর কদম মোচড়ায়। ওরা শুধু পাহাড়ে না, সমতলের গাছ কাটছে, পায়রাদের বুকে গুলি করছে, বকুল তলায় উঁই দিচ্ছে আর মাধবীলতা উপড়ে দিচ্ছে।
তুমি যে কদম ফুলের বায়না ধরেছো, তা তোমার হাতে থাকবেতো! আমি যে তোমার হাতের, হাতের ফুলের, ফুলের পাপড়ির, পাপড়ির রেনুর জন্য যুদ্ধে নেমেছি তা তুমি বুঝলে না কন্যা। আমার সাধের সন্ধ্যামালতি তুলে ফেললে, বললে তোমাকে নাকি মশায় পেয়েছে।
কন্যা, আমি এখনো তোমার হাতে বকুলের চুড়ি, বেলীর দুল, মাধবীলতার খোঁপা, সবুজ ঘাসের পায়েল আর করবী ঝুলানো নীলকাঞ্চনের মালার জন্য লড়াই করছি। তুমি আমার বাকি সন্ধ্যামালতি সহ নয়নতারা গুলো তুলে ফেলো। আমি না হয় আরেকটা কদমের চারা পুতে দেবো।

ইতি,
অনিমেষ

Friday, April 16, 2021

পোড়া ঘর

(শেখ মাসুকুর রহমান শিহাব)
আগুনে পুড়লে নাকি খাঁটি হয়?
লোহা, সোনা, রুপা পিতল সব নাকি খাঁটি হতে আগুনে পোড়ে।
মানুষ আগুনে পুড়লে কি হয় জানেন?
বস্তির ঘর, শেষ সম্বল, সস্তায় কেনা সাধের লাল শাড়ি?
জানেন?
রাস্তার পাড়ে লম্বা লম্বা দালানগুলানে আগুন লাগে না,
কাঠ, খড়, পলিথিন আর ভাঙ্গা টিনের বস্তিতে আগুন লাগে কেন? জানেন?

গরিবের রক্ত পোড়ে,
হ, গরিবের রক্ত পোড়ে জন্যই ঢাকার শহরে আসমান সমান দেয়াল উঠে,
রক্ত-ঘাম-শরীর পোড়ায়েই রিক্সা নিয়ে শখের শহরে ঘোরে প্রেমিক জুগল,
গরিবের বয়স পোড়ে জন্যই সোনালী রঙের সাজ উড়ে বেড়ায় মরার শহরে, 
এই শহর আরো সোনালি করতেই কি গরিবের বস্তি পোড়ে?

ছাই হয়ে যাওয়া স্তুপের মধ্যে থেকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে আনে শেষ সম্বল, 
পেট তো সহ্য করে না, ঘরের আগুনে ক্ষুধার আগুন মরে না।
পুড়ে যাওয়া আঁচল শুকায় না,
ছাই দিয়ে শরীর ঢাকে না,
স্বপ্ন পরে থাকে 
ছাই চাপা চোখে স্বপ্ন দেখা যায় না।

বস্তিগুলাতে কেন আগুন লাগে জানেন? 
হাড় মাংসের মানুষ থাকলেও ভাঙ্গাচোরা ঘরে সামাজিক প্রভুরা থাকে না।

(২৪ নবেম্বর ২০২০, বগুড়া)